স্মৃতির মাঝে: এষা সরকার
অদিতি আজ হোটেলের ব্যালকনিতে কফির কাপটা নিয়ে এসে দাঁড়ালো রেলিং এ ভর দিয়ে। সূর্যদয় হল কেবল। কতদিন পর এরকম সূর্যদয় দেখলো ও। এরকম নয় যে ও ঘুম থেকে দেরী করে ওঠে। শহরের বড় বড় ইমারতের মাঝে সূর্যদেবকে দেখা আজকাল প্রায় অসম্ভব। প্রতিদিন সকালে ওঠা ওর অনেক দিনের অভ্যাস। সকালে উঠে একটু প্রাণায়াম করে নিজের খুব পছন্দের গাছগুলোর সাথে সময় কাটাতে কাটাতে স্নানের সময় হয়ে যায়। স্নান পুজো সেরে ব্রেকফাস্ট বানিয়ে রান্নার লোককে দুপুরের টিফিনের দিকটা বুঝিয়ে দিয়ে টেবিলে চা নিয়ে বসে পেপার পড়তে পড়তে দীপ মানে ওর বর উঠে পড়ে। তারপর তো নিজেকে রেডি করা দীপের দিকটা গুছিযে ইউনিভার্সিটির জন্য বেড়িয়ে যাওয়া এই রুটিন ওর আজ তিরিশ বছরের। গতকাল ও এসেছে কেরালার মুনার নামক একটি জায়গায়। ও এসেছে বলা ভুল হবে ওকে প্রায় জোর করে নিয়ে এসেছে ওর মেয়ে আহেলি। সামনের মাসে ওর বিয়ে। বিয়ের পর পোস্ট ডক্টরেট করতে ও চলে যাবে অস্ট্রেলিয়া। ওর বরও ওখানেই আছে আজ একবছর হল। দুজনেই একই সাথে কলেজ ইউনিভার্সিটি থেকে মাইক্রোবায়োলজি নিয়ে পড়াশোনা করেছে। তখনই প্রেম আর পরের মাসে ওদের বিয়ে। তাই ওর বাবা মানে দীপ ওকে বলেছে এই বিয়ের একমাস আগে বাবা মায়ের সাথে যা যা শখ মেটানোর ও মিটিয়ে নিতে পারে। তার পরেরদিন ই ও একটা লম্বা লিস্ট হাজির করেছিল ওদের সামনে। যার বেশিরভাগটাই ছিল ওর বাবা কে ঘিরে। ওই লিস্টে একটা ইচ্ছা ছিল ও শুধুমাত্র ওর মায়ের সাথে কোথাও ঘুরতে যাবে। যেটা অদিতিকে খুবই অবাক করেছিল। কারণ আছেলি ওর বাবার আদরের মেয়ে। এটা ওর বাবার সাথে হলে অবশ্য ওর স্বাভাবিকই মনে হতো। যাইহোক অনেক জোড়াজুড়ির পরে সাতদিনের একটা ছুটি নিয়ে অবশেষে মা মেয়ে এখানে। জায়গা অবশ্য আহেলি পছন্দ করে রেখেছিল। জায়গাটা মন্দ নয়। বরং খুব ভালোই বলতে হবে। চারিদিকে চা বাগান। সবুজে সবুজ সব জায়গা। কফিটা শেষ করতে করতে পেপারটাও প্রায় পড়া হয়ে গিয়েছিল ওর। শেষের পাতায় চোখ রেখেছে এমন সময় ওর ঘরের বেলটা বেজে উঠলো। ও পেপারটা রেখে দরজাটা খুলে দেখলো ঘুম ঘুম চোখে আছেলি ঢুকলো ওর ঘরে। তারপর ওর টানটান করে সাজানো বিছানায় নিজেকে ফেলে দিয়ে বালিশটায়। মাথা রেখে আহেলি বলল, “মা বেরতে হবে রেডি হয়ে নাও।
অদিতি কথাটায় একটু হেসে বলল, “আমি রেডি। আমার স্নানও হয়ে গেছে। তোর জন্য অপেক্ষা করছি আমি। যা ফ্রেস হয়ে নে। ব্রেকফাস্ট করতে হবে। “হুম। বলে বালিশে মুখটা গুঁজে দিল আহেলি। “যা ওঠ। আমাকে কি হোটেলে বন্দী করে রাখার জন্য এনেছিস। ঘুরতে এসে কোথায় সকালে উঠে বেরবো তা নয়। সকাল গড়িয়ে বেলা হয়ে গেল। “কেবল সাড়ে নটা বাজে মা এটাকে সকালই বলে। “আমি আর তোর বাবা কোথাও গেলে দেখেছিস তো সেই সকাল ছটার মধ্যে চলে যাই ঘুরতে। “ওহ্ মা তোমাদের বয়স হয়ে গেছে। লাইফ বোরিং হয়ে গেছে তাই তোমরা সকালে কোন কাজ না পেয়ে ঘুরতে চলে যাও। ঘুরতে এসে কেউ সকালে ওঠে? “ঠিক আছে। আমি একাই চললাম। তুই থাক। “আচ্ছা উঠছি। তুমি ভভক্ষণ একটা ভালো কেরালিয়ান ব্রেকফাস্ট অর্ডার করো ভো আমি এসে খাচ্ছি। খুব খিদে পাচ্ছে। ” বলে উঠে নিজের ঘরে চলে গেল আহেলি। সকাল এগারোটা নাগাদ একটা গাড়ি বুক করে বেড়িয়ে পড়লো। সারাদিন ঘুরে এসে অদিতি একটু রেস্ট নিচ্ছিল নিজের ঘরে এমন সময় আহেলি এসে বলল, “মা আজ তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ো। কাল সকাল ঘুরতে বেরতে হবে। “কোথায় রে এতো সকালে?
“কাল আমরা ট্রেকিং এ যাব। “এই বয়সে ট্রেকিং। আমার দ্বারা হবে না। তুই একা চলে যা “মা আমরা সব একসাথেই করব এটাই কথা হয়েছিল। এখন এসব শুনব না। “তখন তো এসব কথা ছিল না। “মা প্লিজ একসাথে কিছু উত্তেজনাকর কাজ করি। তাহলে এই ট্রিসটা আমার মনে থাকবে। পাহাড়ের একদম মাথায় উঠে অদিতি একদম হাঁপিয়ে গেছে। ও জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে থাকে। আহেলি ওকে জলের বোতলটা এগিয়ে দেয়। একটু জল খেয়ে একটু শান্ত হয়ে অদিতি বলে, “তুই যে আমাকে আর কি কি করাবি এই বয়সে “কেন? চারিদিকে তাকিয়ে দেখো খারাপ লাগছে তোমার এই দৃশ্য দেখে। ও চারিদিকে তাকিয়ে নেয় একবার। কি অপূর্ব সুন্দর যে লাগছে সে আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ও একটু তাকিয়ে নিয়ে বলে, “সত্যিই খুব সুন্দর জায়গাটা “হুম চলো আমাদের এই মুহূর্তটা ফ্রেমবন্দী করি। “বলে আহেলি একটা সেলফি তুলল ওর মায়ের সাথে। “অনেক বছর পর এরকম ট্রেকিং করলাম। সেই কলেজের ট্যুরে একবার করেছিলাম বন্ধুদের সাথে।
“আচ্ছা তোমার কলেজের সব বন্ধুদের কথা মনে আছে? “না বেশির ভাগেরই তো নাম ভুলে গেছি। দেখলে চিনতেও পারব না হয়তো। ওই ফেসবুকে কয়েকজনের সাথে যোগাযোগ আছে আর কি। “তোমার বন্ধু নিখিলের কথা মনে আছে? নামটা শোনামাত্র অদিতি একটু থমকে যায়। তারপর আহেলির দিকে তাকিয়ে বলে, “তুই কি করে জানলি ওর নাম? “তোমার বইয়ের তাকে কয়েকটা বইতে রবীন্দ্রনাথের প্রেমের কবিতার লাইনের সাথে ওনার নাম পেয়েছি তাই। “ওহ্। মুখটা মনে আছে। এখন দেখলে চিনব কি না জানিনা। “একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো যদি কিছু মনে না কর। অদিতি জানে ও কি বলতে চায়। ও তাও বলল, “বল। “নিখিলের সাথে কি তোমার কোন সম্পর্ক ছিল? আহেলিকে দীপ আর অদিতি খুব স্বাধীনভাবে বড় করেছে। ওর বাবা মা সম্পর্ক ছাড়াও ওদের দুজনের সাথে আছেলির বন্ধুত্বের সম্পর্কও আছে। তাই আহেলির এই প্রশ্নে অদিতির অস্বাভাবিক লাগে নি। ও একটু হেসে বলল, “হ্যাঁ ওই কলেজের প্রেম আর কি
“ওহ্… আমার মা রোমান্টিক ও ছিল। “তোদের মতো বয়েসে সবাই রোমান্টিক থাকে। শুধু জেনারেশন অনুযায়ী ভালোবাসার দৃষ্টিকোণ বদলে যায়। “ভো সেই রোমান্টিক গল্পটা একটু শোনা যাবে? যদি খুব ব্যক্তিগত না হয়। কথাটা শুনে অদিতি হো হো করে হেসে ওঠে। তারপর বলে “না না সেরকম কোন ব্যক্তিগত কিছুই না। ওই কলেজে যেমন হয় আরকি। “ডিটেলস প্লিজ। “তোর মায়ের প্রেমের গল্প শোনার এতো শখ রে? “আর তো কারোর শুনছি না নিজের মায়েরই শুনছি। আমি বিয়ে করে দুদিন পড়ে চলে যাব। তারপর কোথায় থাকবো কবে দেখা হবে জানিনা। এরকম একটা সময় আর পাব না। তাই কিছু স্মৃতি তো মনে থেকে যাক। এমন সময় ওদের ট্রেকিং হেড ওদেরকে ডাকল। ওরা উঠে পড়লো। নামার সময় আহেলি ওর মায়ের হাতটা ধরে আস্তে আস্তে নামতে সাহায্য করলো। রাতে ডিনারের পরে অদিতি ফ্রেস হয়ে বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখে আহেলি ওর বিছানায় শুয়ে আছে। একটা বই হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করছে। ও বলল, “কিরে তোর ঘরে যাস নি এখনও। রাত তো অনেক হলো। “না পরে যাব। আগে তোমার গল্প বলো।
“কিসের গল্প? “তোমার প্রেমের উপাখ্যান। “উফ বা বা তোর মনে আছে আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম। “ভুলে গেলে তো হবে না। আমি যাচ্ছি না। অগত্যা অদিতি এসে আহেলির পাশে শুয়ে একটা চাদর গায়ে দিয়ে আহেলিকে ভালো করে ঢেকে বিছানায় হেলান দিয়ে বসল। তারপর শুরু করলো। “কলেজের প্রথম বছর। কলেজ মানেই অন্য এক স্বাধীনতা। শরীরের রক্ত গরম। সবকিছু যেন আমরাই বদলে দেব। ক্যান্টিনে বসে আছি এমন সময় নিখিল এলো ওর বন্ধুদের নিয়ে। ও কলেজের ইউনিয়ানের সাথে জড়িত ছিল। আমাদের ডিপার্টমেন্টেরই একবছরের সিনিয়র। রক্তদান শিবির করতে চায় কলেজে। আমাদের কাছে অনেকগুলে জ্ঞান দিয়ে প্রায় জোর করেই নাম লিখিয়ে নিল রক্তদানের জন্য। পরের রবিবার কলেজের রক্তদান। আমি ভয়েই অস্থির। তাও নাম দিয়েছি যেতে তো হবেই। গেলাম তাও ভয়ে ভয়ে। রক্ত নেওয়া শুরু হল। আমি তো অন্যদিকেই তাকিয়ে ছিলাম রক্ত নেওয়া হয়ে গেলে আমি পাশে ফিরে আমার রক্তের ব্যাগটা দেখে নিজেই অজ্ঞান হয়ে গেলাম। “তুমি রক্ত এতো ভয় পাও মা? “পেতাম। তুই যখন হলি তখন তো এতোকিছু হয়েছে যে আর এখন ভয় লাগে না।
“তারপর? “ভারপর আর কি জ্ঞান ফিরতে দেখি ক্যাম্পের বেডে আমি শুয়ে আছি। আর নিখিল অস্থির চোখে আমাকে দেখছে। চোখ খোলা মাত্র ও বলে উঠলো, “যাক বাবা জ্ঞান ফিরেছে। আমাদের তো ভয় দেখিয়ে দিয়েছিলে। “আমি উঠে বসে বললাম না আমি ঠিক আছি। আমি হোস্টেলে ফিরব। “একটু রেস্ট নিয়ে নাও আমি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি। “না না আমি পারবো। সামনেই তো হোস্টেল। পাঁচ মিনিটের হাঁটা পথ। নিখিল শুধু বলল, “আপাতত রেস্ট নাও। পরে একটু সুস্থ হয়ে নিখিল নিজে গিয়ে আমাকে হোস্টেলে পৌঁছে দেয়। তারপর দু একবার কলেজে দেখা ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব। তারপর প্রেম। একসাথে বইমেলা যাওয়া৷ কফি হাউসে আড্ডা দেওয়া। কলেজ স্ট্রিটে নতুন নতুন বইয়ের খোঁজ করা। এসবেই প্রেম হয়ে গেল। দুবছর প্রেম চলল। তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষার পরে ও ব্যঙ্গালোরে চলে গেল ওখানে পড়তে। একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে টেবিলে রাখা জলটা খেয়ে আহেলির মাথায় হাত রাখে অদিতি। আহেলি বলে, “তারপর? “তারপর আর কি দূরত্বের সম্পর্ক যদি মজবুত না হয় তাহলে যেটা হয় সেটাই হল। তখন তো অত মোবাইলের যুগ ছিল না। তাই প্রথম প্রথম কয়েকটি চিঠি আদানপ্রদান তারপর সেটাও শেষ হয়ে যায়। ধীরে ধীরে শুকিয়ে আসে আমাদের প্রেমের সাগর।
তারপর একদিন আমরা আমাদের সম্পর্কের ইতি টেনে দিয়ে নিজেদের জীবনে ব্যাস্ত হয়ে যাই। “তুমি এখনও মিস কর নিখিল কে? “নাহ্ এখন আর মিস করি না। “তবে আজও বইগুলো কেন তোমার বুক সেল্ফত্র। “কারণ ভালোবাসা জিনিসটা অবিনশ্বর। সেটা কখনও হারিয়ে যায় না। নিখিল আমার জীবনের প্রথম প্রেম ছিল। তাই ওর অনুভুতি গুলো আজও একইরকম আছে। তবে সেটা ওই বইয়ের লেখাগুলো অবধি সিমীত তার বাইরে তার কোনো দাম নেই। “হুম একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল আহেলি। এরপর দুএকটা কথা বলতে বলতে আহেলি একসময় ঘুমিয়ে পড়ে। অদিতি উঠে এসে ব্যালকনিতে দাঁড়ায়। ওর মনে পড়ে যায় সেইদিন গুলো। অনেকদিন পরে শত সহস্র স্মৃতির ভিড় ঠেলে এগিয়ে এসেছে আজ ওরা। কি কষ্টই না সেদিন পেয়েছিল ও। কত রাত চোখের জল ফেলেছে। আর ভেবেছে কি ভাবে সম্পর্কটাকে বাঁচিয়ে রাখা যায়। কি বোকা ছিল তখন। আজও ভাবলে হাসি পায় ওর। কিন্তু তারমধ্যে কি কোথাও কোন ভালো লাগা আছে এখনও বেঁচে? আজও সেই সময়ের কথা মনে পড়লে কষ্ট হয় বটে। কি জানে সেটা কি অনুভূতি। বাইরের হালকা হাওয়াটার সাথে একটা যেন ভালোলাগা মিশে আছে। যেটা ওকে যেন আবিষ্ট করছে একটা স্মৃতির বেড়াজালে। পরের দিন সারাদিন ঘুরে এসে বিকালে অদিতি একটু বিশ্রাম নিচ্ছিল। আহেলি গেছে কাছের একটা মার্কেটে শপিং করতে। একটু পরে দরজায় কেউ নক করলো। অদিতি জিজ্ঞাসা করতেই আহেলির গলার আওয়াজ শুনতে পেল। আহেলি দু তিনটে ব্যাগ নিয়ে ঢুকলো।
“বাপরে এতো কি শপিং করেছিস? ও টেবিলে সব প্যাকেট গুলো রেখে একটা প্যাকেট অদিতির দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, “এটা তোমার জন্য। অদিতি খুলে দেখলো একটা বক্স তার ভেতরে বিভিন্ন ফ্লেভারের চা। বাক্স থেকে সুন্দর গন্ধ আসছে। ও বলল, “এটা একটা কাজের জিনিস দিয়েছিল। তোর বাবা আর আমি মিলে খাব যখন তুই থাকবি না। আহেলি হাসলো। তারপর একটু চুপ করে থেকে বলল, “মা একটা কথা বলার আছে। “সে তো সকাল থেকেই বুঝতে পারছি কিছু একটা বলবি বলার চেষ্টা করে যাচ্ছিস। বলে ফেল আর কি সারপ্রাইজ দেওয়া বাকি আছে তোর? “তুমি কিছু খাবে অর্ডার করবো? “না। যেটা বলতে এসেছিস সেটা আগে বল “মা আসলে…. আমি জানি না তুমি কিভাবে নেবে…. মানে… তোমাকে নিখিলের সাথে দেখা করতে হবে। এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে ফেলে আহেলি। কথাটা শুনে অদিতির মুখ গম্ভীর হয়ে আসে। আহেলি সেটা দেখে বলে, “সরি মা আমি অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে ফেলেছি। না গেলে খুব খারাপ হবে ব্যাপারটা
“তুই নিখিলকে কোথায় পেলি? আর অ্যাপয়েন্টমেন্ট এসব আবার কি? “উনি আসলে এখানে তিনটি চা বাগানের মালিক আর এখানকার একজন নামকরা ব্যাবসায়ী। তাই অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হল। “তুই ওকে কি করে যোগাযোগ করলি? “আসলে আমি যখন ইউনিভার্সিটিতে প্রথম বর্ষে পড়ি তখন তোমার বইগুলোতে ওন নাম পাই। তারপর আমি স্যোশাল সাইটে ওনাকে খুঁজে পেয়ে ওনার সাথে যোগাযোগ করি। তোমার কথা বলাতে উনি তোমার সাথে দেখা করতে রাজি হয়। অদিতি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে, “এইজন্যই কি তুই আমার সাথে এখানে আসার প্লান করেছিলিস? তারমানে আমার সাথে ঘুরতে আসাটা শুধু লোক দেখানো।” “না মা আমি সত্যিই তোমার সাথে একটা ভালো সময় কাটাতে চেয়েছিলাম চলে যাওয়ার আগে। আমি মানছি ঘুরতে আসার জন্য এই জায়গাটা আমি বেছে নিয়েছি ওনার জন্য। “তুই যেটা করেছিস একদম ঠিক করিস নি। খুব অন্যায় করেছিস। “আমি জানি। আসলে যখন থেকে বইগুলো দেখেছি তখন থেকে আমার খালি মনে হতো তুমি হয়তো ওনাকে মিস করো। হয়তো ব্যাপারটা একটা অসমাপ্ত কিছু দেখ হলে হয়তো তোমার ভালো লাগবে। অদিতি আর কোন উত্তর দেয় না। আহেলি কিছুক্ষণ চুপ থেকে প্যাকেট গুলো তুলে নিয়ে নিজের ঘরে যাচ্ছিল তখন অদিতি পেছন থেকে ডেকে বলল, “কথন যেতে বলিস৷ আর তুইও তৈরী থাকিস।
“কিন্তু আমি… “ওটাই আমার শর্ত। “থ্যাংক ইউ মা। বলে আহেলি বেড়িয়ে গেল। পরের দিন সকাল এগারোটা নাগাদ ওরা বেড়িয়ে পড়লো। অদিতি আর আহেলি শহরের একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে ঢুকলো। অদিতি ভেতরে ঢুকে চারিদিকে তাকাতেই একটা টেবিলে ওর চোখ আটকে গেল। সেই চেনা চোখ। এতো বছরে মুখের আদ বদলালেও চোখদুটি এখনও একইরকম উজ্জ্বল। ওকে দেখে নিখিল উঠে দাঁড়ালো। গিয়ে টেবিলের সামনে যেতেই নিখিল ওদের চেয়ারগুলো টেনে ওদেরকে বসতে সাহ করলো। অদিতি বসে বললো, থ্যাংকস নিখিল। “ইউ আর ওয়েলকাম। “তুমি তো আছেলি? আহেলির দিকে তাকিয়ে বলল নিখিল। “হুম। হাই। “হ্যালো৷ “তো কবে এলে তোমরা এখানে? “এইতো চারদিন হলো। কাল বিকালে ফিরব।
“ওহ্। কেমন লাগছে? “খুবই সুন্দর। “হুম শহরটা ছোট হতে পারে কিন্তু খুব শান্ত এবং সুন্দর “কি খাবে বলো? যা হোক একটা…. এমন সময় আছেলির ফোনটা বেজে উঠলো। ও ওদের দিকে তাকিয়ে বলল, “আমি একটু আসছি। বলে ফোনটা নিয়ে বেড়িয়ে গেল। বাইরে এসে বলল, “থ্যাংক ইউ। ফোনটা করার জন্য আমি তোর ফোনেরই অপেক্ষা করছিলাম।” “কি করেছিস বলতো? অনিকেত ওপাশ থেকে বলে উঠলো ওর হবু বর এবং বন্ধু “পরে। পরশু ফিরে সব বলছি। তবে যেটা করেছি জানিনা সেটা ঠিক কিনা। “তোকে ভরসা করা যায় না। যাইহোক করে যখন ফেলেছিস তখন আর ভেবে করবি। সাবধানে থাকিস। এদিকে আহেলি বের হয়ে যাওয়ার পরে নিখিল অদিতি দুজনেই চুপ। নিখিল বলল, “কেমন আছ অদি?
“ভালো। তুমি কেমন আছো? “চলছে ভালোই। “তোমার সাথে আহেলির কতদিন হল যোগাযোগ? “এইতো প্রায় বছরখানেক হল। ও যখন তোমার কথা বলল আমি অবাকই হয়ে গিয়েছিলাম। তোমার সাথে এভাবে যোগাযোগ হবে ভাবিনি। “হুম আমিও ভাবিনি। “তবে তোমার মেয়ে খুব মিষ্টি এবং স্মার্ট। “হুম কার মেয়ে দেখতে হবে তো। দেখলে না কেমন আমাদের স্পেস দেওয়ার জন ফোনের ছুতোয় বাইরে গেল। “ওহ তাই। “হুম ও মনে করে হয়তো আমাদের কিছু অসমাপ্ত কথা থাকতে পারে যেগুলো ওর সামনে বলা যায় না। “ওফ আজকালকের জেনারেশন। অদ্ভুত। আমার ছেলেও মাঝে মাঝে এমন সব করে “কয় ছেলে মেয়ে তোমার? ”
“এক ছেলে। এসো কালকে বাড়িতে। “সরি৷ সেটা হবে না । আমাদের হাতে অতটা সময় নেই। “ইটস ওকে জোর করবো না। খাওয়ারটা অর্ডার করি? “হুম প্লিজ। “কি খাবে বলো বলে মেনুটা ওর দিকে এগিয়ে দেয় নিখিল। “এরমধ্যে আহেলি চলে আসে তারপর ওরা খাওয়াদাওয়া করে বেড়িয়ে পড়ে। যাওয়ার সময় আহেলি বলে, “থ্যাংক ইউ মিস্টার নিখিল। অদিতি ওর দিকে তাকিয়ে বলে, “আহেলি উনি তোমার থেকে অনেক বড়। তুমি ওনাকে নাম ধরে ডাকছো?” নিখিল বলল, ‘ইটস ওকে অদিতি। আমরা আহেলির দিকে তাকিয়ে বলে নিখিল। বলে আছেলি। একদম। “চলি। বলল অদিতি। “বাই। বন্ধু। কি তাইতো?
অদিতি হোটেলে ঢুকে রিসেপশনের দিকে চোখ যেতেই দেখে দীপ দাঁড়িয়ে আছে। ওদের দেখে এগিয়ে এসে একগুচ্ছ গোলাপ নিয়ে অদিতিকে দিয়ে বলে, “শুভ জন্মদিন। “থ্যাংক ইউ। তুমি হঠাৎ? “তোমার জন্মদিনে তোমাকে সামনাসামনি উইশ না করে থাকা যায়। তাই চলে এলাম। সরি আছেলি তোদের প্ল্যানে ঢুকে পরলাম। “না বাবা তুমি একদম ঠিক করেছো। “তাহলে আজকে তুই আমাদের ঘোরাবি তো?” “অবশ্যই। মায়ের জন্মদিনটাও ভালোভাবে কাটানো যাবে।” “চল তার আগে একটু ফ্রেস হয়ে নেওয়া যাক। আহেলির মনেই ছিল না জন্মদিনের কথাটা। ও এসে ওর মা কে উইশ করে। তারপর ওরা নিজেদের রুমের দিকে যায়। দীপ কিছুটা এগিয়ে গিয়েছিল। অদিতি আহেলিকে একটু নীচু গলায় বলল, “আশাকরি এবার তুমি বুঝবে যে কেন আমার মনে নিখিলের কোন অস্তিত্ব অবশিষ্ট নেই। সব লাভস্টোরিই যে একজন পারফেক্ট জীবনসঙ্গীর সন্ধান দেবে এর কোন মানে নেই। কিন্তু একজন প্রকৃত জীবনসঙ্গী তোমাকে ভালোবাসার সাথে পরিচয় করাবে এটা নিশ্চিত। আহেলি মাথা নেড়ে একটু হাসলো। তারপর ওরা নিজেদের ঘরের দিকে এগিয়ে গেল।