ধারাবাহিক গল্প

শ্রাবণ আঁধারে পর্ব ১০

কলমে নিশাত জাহান নিশি

 

“কি হয়েছে চিএা? তোকে এতো এলোমেলো দেখাচ্ছে কেনো?”

চিএা ইতস্ততবোধ করে আমার পানে চেয়ে ম্লান হেসে বলল,,

“কোথায় কি এলোমেলো দেখাচ্ছে? তুই বরাবরই বেশি বুঝিস!”

চিএার কথায় সায় জানাতে পারলাম না আমি। অজানা কিছু জানার আগ্রহবোধ থেকে আমি চিএার সম্মুখস্থ হয়ে জিগ্যাসু কন্ঠে বললাম,,

“এতক্ষণ কোথায় ছিলি তুই? কতোটা রাত হয়ে গেছে বুঝতে পারছিস?”

চিএা মাথা নত করে ক্ষীণ কন্ঠে বলল,,

“ইদানিং নাচের বাড়তি ক্লাস হচ্ছে। আমি কি করতে পারি বল?”

“অনুরাধা ম্যামকে কল করব আমি? জানতে চাইব কিসের এতো বাড়তি ক্লাস হচ্ছে?”

চিএা থমতম খেয়ে লাগাতার শুকনো ঢোক গিলে অস্থির দৃষ্টিতে আমার পানে চেয়ে বলল,,

“কককল করতে যাবি কেনো? আআমার মুখের কথা তোতোতোর বিশ্বাস হয় না?”

“এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে মোটে ও বিশ্বাস করতে পারছি না। কাল একবার অনুরাধা ম্যামের সাথে আর্জেন্টলি দেখা করতে যেতে হবে আমার৷ একাডেমীতে যাওয়ার সময় মনে করে আমাকে ডেকে নিবি!”

চিএা ব্যতিব্যস্ত কন্ঠে প্রসঙ্গ পাল্টাতে বলল,,

“সেই দেখা যাবে ক্ষণ। সামনে থেকে সর। ক্লান্ত লাগছে ভীষণ, স্নান নিতে হবে।”

আমাকে পাশ কাটিয়ে চিএা নিজের রুমের দিকটায় পা বাড়ালো। চিএার পিছু পিছু আমি ও রুমের ভেতর পা বাড়িয়ে সন্দেহ জনক কন্ঠে বললাম,,

“এই সন্ধ্যায় তুই স্নান করবি? দুপুরে করিস নি?”

কাঠের আলনা থেকে সালোয়ার স্যুট হাতে নিয়ে চিএা আমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে হযবরল কন্ঠে বলল,,

“কককরেছি৷ এএএখন আবার করব!”

চিএা প্রস্থান নিলো। চিএা যাওয়ার পথে কিছুক্ষণ সন্দেহজনক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে আমি ধপ করে বিছানায় বসে পড়লাম। মাথা নিচু করে কপালে হাত ঠেকিয়ে আমি দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে বিড়বিড়িয়ে বললাম,,

“কি লুকুচ্ছে চিএা আমার থেকে? ভিতরে ভিতরে কি ভয়ঙ্কর কিছু একটা চলছে? চিএার ভাব, ভঙ্গি, ব্যবহার, আচরণ, ভয়ে সিঁথিয়ে যাওয়া মুখভঙ্গি, চোখে প্রবল দুশ্চিন্তার ছাপ। পুরোটাই ভীষণ গন্ডগোল ঠেকছে আমার। চিএার এই বেপরোয়া, হেয়ালী মনোভাব কি আমাকে কোনো সত্যি বের করার ইঙ্গিত দিচ্ছে?”

কপালটা চিনচিনে ব্যাথায় ফেঁটে যাচ্ছে আমার। অস্থিরতায় বুকটা কাঁপছে। আসন্ন বড় কোনো বিপদের ইঙ্গিত আমার মস্তিষ্কে সাইরেন বাজাচ্ছে। বসা থেকে উঠে আমি দ্রুত পায়ে হেঁটে পাশের রুমে কাকুর ঠিক পাশ ঘেঁষে বসলাম। কাকু চোখ বুজে খুব জোরে জোরে নাক টেনে নিশ্বাস নিচ্ছেন। দেখেই বুঝা যাচ্ছে কাকু ভীষণ অসুস্থ, শ্বাস নিতে ও ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। মুখে মন খারাপের ছাপ ফুটিয়ে আমি কাকুর ডান হাতটা ধরে গলা খাঁকিয়ে জিগ্যাসু কন্ঠে বললাম,,

“কাকু, আপনার কি শ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে?”

কাকু চোখ মেলে আমার দিকে তাকালেন। অতঃপর ম্লান হেসে বললেন,,

“এ আবার নতুন কি বাবা? বিগত ৫ মাস ধরে তো এভাবেই কোনো মতে শ্বাস নিয়ে বেঁচে আছি। ভাগ্যিস মেয়েটা দু, একটা টিউশনি করায়। আমার ঔষধের খরচ চালায়। নয়তো এই বেঁচে থাকার সুখটা ও আমার কপালে জুটত না।”

আগ পাছ না ভেবে আমি সারল্য কন্ঠে কাকুকে বললাম,,

“এবার থেকে আমি আপনার ঔষধ খরচ চালাবো কাকু। আপনি তো আমার আরো এক বাবা। আমার শ্বশুড় মশাই!”

কাকু ভ্রু জোড়া ভয়ঙ্কর ভাবে কুঁচকে প্রশ্নবিদ্ধ কন্ঠে বললেন,,

“মানে?”

“আমি চিএাকে বিয়ে করেছি কাকু। এক মাস পেরিয়ে গেছে প্রায়।”

কাশের গতি যেনো বেগতিক বৃদ্ধি পেলো কাকুর। কাশতে কাশতে দলা মোঁচড়া হয়ে কাকু উধ্বগতিতে শ্বাস ছেড়ে বললেন,,

“যা বলছ, ভেবে চিন্তে বলছ তো আরাধ্য?”

আমি ম্লান হেসে কাকুর চোখে দৃষ্টি স্থির করে বললাম,,

“হুম কাকু। যা বলছি ভেবে চিন্তে বলছি।”

“তোমার বাবা? মা? উনাদের কথা ভেবেছ?”

“উনাদের কথা ভাবার কি আছে কাকু? উপযুক্ত বয়স হয়েছে আমার। নিজের সিদ্ধান্ত আমি নিজেই নিতে পারি, জীবনসঙ্গী বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্তটা ও আমি নিজেই নিতে পারি। যার সাথে আমি ভালো থাকব, সুখে থাকব আমি নিশ্চয়ই তাকে বিয়ে করব। আমার এই স্বেচ্ছাচারীতায় হক নেই কারো অনধিকার চর্চা করার।”

“তোমার বাবা আমাদের কাউকে ছাড়বেন না আরাধ্য। খবরটা ফাঁস হওয়ার সাথে সাথেই উনি তৎপর হয়ে উঠবেন আমাদের ক্ষতি করার। বিশেষ করে চিএার ক্ষতি করার।”

“এই নিয়ে আপনি দুঃশ্চিন্তা করবেন না কাকু। দরকার প্রয়োজনে আমি আপনাকে এবং চিএাকে নিয়ে কাশিয়ানী চলে যাবো। ওখানের একটা ফ্ল্যাটে আমরা নিজেদের বাসস্থান গড়ে তুলব।”

“এতোটা স্বার্থপর হয়ো না আরাধ্য। বাবা-মায়ের একমাএ সন্তান তুমি। তোমাকে ঘিরে কতো আশা ভরসা উনাদের। স্বপ্নের কথা না হয় বাদ ই দিলাম। বাবা-মাকে ছাড়ার কথা আগামী সাত জন্মে ও ভেবো না। তারাই দুনিয়াতে তোমার পরম আপন!”

“স্বার্থপর আমি না কাকু৷ স্বার্থপর তো আমার বাবা। নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্যে উনি নিজের ছেলের জীবনটাকে নষ্ট করে দিতে চাইছেন। তার ভালোবাসাকে স্বীকৃতি দিতে চাইছেন না। মিথ্যে আত্নসম্মানের কথা ভাবছেন। মূলত, মৃত্যুর পর যার আদৌতে কোনো মূল্য নেই।”

কাকু চোখের জল ছেড়ে মাথাটা নিচু করে নিলেন। শান্ত কন্ঠে আমি কাকুকে বললাম,,

“কাঁদবেন না কাকু। ভালো দিন আসছে আমাদের। কয়েকটা মাস অপেক্ষা করুন। চিএা এবং আমার বিয়ের কথাটা ও আর গোপন থাকবে না।”

ইতোমধ্যেই চিএা সদ্য স্নান সেরে কাকুর রুমে প্রবেশ করল। ভেজা চুলে কোনো রকম টাওয়াল না পেঁচিয়ে চিএা উদাসীচিত্তে কাকুর পাশে দাঁড়িয়ে জিগ্যাসু কন্ঠে বলল,,

“চা খাবে বাবা?”

কাকু চোখের জল আড়াল করে চিএার দিকে চেয়ে বললেন,,

“আরাধ্যের জন্যে ও বানাস এক কাপ।”

চিএা পাশ ফিরে সরল দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো। আমি চোখ লাল করে রাগান্বিত কন্ঠে বললাম,,

“চুল থেকে পানি পড়ছে তো। টাওয়াল কোথায় তোর? চুলটা বাঁধতে পারছিস না?”

কোনো রূপ প্রতিত্তুর না করে চিএা রান্নাঘরের দিকে পা বাঁড়ালো। কাকুর পাশ থেকে উঠে আমি দ্রুত পায়ে হেঁটে রান্নাঘরে চিএার ঠিক পেছনটায় দাঁড়িয়ে তীক্ষ্ণ কন্ঠে বললাম,,

“কি হয়েছে তোর? আমাকে ইগনোর করছিস?”

গ্যাসে জল বসিয়ে চিএা পিছু ফিরে আমার দিকে তাকিয়ে নির্লিপ্ত কন্ঠে বলল,,

“শর্মিষ্ঠার গাঁয়ে হলুদে যাবি না? অনুষ্ঠান হয়তো শুরু হয়ে গেছে।”

“আমাকে ইগনোর করছিস কেনো আগে ওটার উত্তর দে?”

“কোথায় কি ইগনোর করলাম? তোর দেরি হয়ে যাচ্ছে তাই বললাম!”

প্রখর রাগান্বিত ভাব নিয়ে আমি চিএার ডান হাতটা চেঁপে ধরে বললাম,,

“আবারো ইগনোর করছিস? বল কি হয়েছে?”

চিএা হঠাৎ ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে উঠল,,

“কি হবে আমার হুম? কি হবে?”

চিএার অহেতুক রাগকে প্রাধান্য না দিয়ে আমি চিন্তিত কন্ঠে বললাম,,

“তোর চোখ, মুখের এই অবস্থা কেনো? নিজের প্রতি যত্নের কোনো ছিটেফোঁটা ও দেখছি না। উদাসী ভাব প্রখরভাবে বিদ্যমান। বল কি হয়েছে? কোনো কিছু নিয়ে চিন্তিত তুই?”

“কিচ্ছু হয় নি আমার, কিচ্ছু না। বাবার অসুস্থতা আমাকে ভীষণ যন্ত্রণা দিচ্ছে। নিজের প্রতি যত্নহীন করে তুলছে। বুঝছিস না তুই?”

চিএার হাতটা ছেড়ে আমি চোখে অস্থিরতা নিয়ে চিএাকে বুকের মাঝে মিশিয়ে নিলাম। আমাকে ঝাপটে ধরে চিএা ফ্যালফ্যালিয়ে কেঁদে বলল,,

“বাবা ছাড়া এই দুনিয়ায় আমার আর কেউ নেই আরাধ্য। যদি ও তুই আছিস আমি জানি, এরপরে ও বাবার সাথে তো আমার রক্তের টান। বাবার শরীরের এতো খারাপ অবস্থা দেখলে কোন মেয়ে ই বা ঠিক থাকতে পারে বল?”

গলা জড়ানো কন্ঠে আমি চিএার মাথায় আলতো হাত বুলিয়ে বললাম,,

“চিন্তা করিস না তুই। দু, এক মাস পরে আমি তোদের নিয়ে কাশিয়ানী চলে যাবো। ওখানে আমরা ছোট্ট একটা সংসার বাঁধব। কাকুর সমস্ত ঔষধ খরচ ও আমি বহন করব। নতুন একটা পরিবার হয়ে উঠবে আমাদের। কোনো দুঃখ, দারিদ্র্যতা, কাঠিন্যতা থাকবে না তখন।”

“বললেই কি সব সম্ভব আরাধ্য? চাইলেই কি ঘর বাঁধা যায়? সংসার বাঁধা যায়?”

“তুই বাবাকে নিয়ে ভয় পাচ্ছিস তাই তো? বাবা আমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবেন না চিএা। কোনো বাহানায় আমাদের আলাদা ও করতে পারবেন না। আরাধ্য চিএার সাথে পুরোপুরি মিশে গেছে। চিএাকে পুরোপুরি নিজের করে নিয়েছে।”

চিএা বোবা কান্নায় মশগুল হয়ে পড়েছে। আমার শার্ট ভিজিয়ে কান্না করতে ব্যস্ত সে। উদ্বিগ্ন হয়ে আমি চিএাকে আমার বুকের পাজর থেকে উঠিয়ে অস্থির চোখে চিএার দিকে চেয়ে বললাম,,

“অল্পতেই এতো কাঁদতে হয় কেনো তোর? চোখের জলে লাগাম নেই?”

চিএা ফুঁফিয়ে কেঁদে হঠাতের মধ্যে আমার ঠোঁট জোড়া দখল করে নিলো। আমি বেকুব হয়ে চিএার দিকে এক ধ্যানে চেয়ে আছি। চিএা আমার সাঁয় না পেয়ে নিজে একাই আমার ঠোঁটে চুমো খেতে খেতে বলল,,

“আমাকে আদর করতে মন চায় না তোর?”

ক্ষুব্ধ হয়ে আমি চিএাকে রান্নাঘরের দেয়ালের সাথে মিশিয়ে জোরালো ভাবে চিএার ঠোঁট জোড়া দখল করে বললাম,,

“ভীষণ মন চায়। তোকে পেলে ছাড়তেই ইচ্ছে করে না।”

চিএা নিশ্চুপ হয়ে আমার শার্টের কলার আঁকড়ে ধরল। আমার পাগলামোতে চিএা ও সায় দিলো। বেশ কিছুক্ষন পর চিএার ঠোঁট জোড়া ছেড়ে আমি ঘোর লাগে চোখে চিএার ভেজাক্ত ঠোঁটের দিকে চেয়ে বলল,,

“১২ টার পর আসব আমি। ঘুমিয়ে পড়িস না আবার!”

“বাড়ির সবাইকে আড়াল করে আসতে পারবি?”

“পারব। কাকুকে রাতের খাবার খাইয়ে, ঔষধ খাইয়ে দিস।”

“চা টা খেয়ে যা।”

আমি মৃদ্যু হেসে বললাম,,

“ওকে।”

কাকুর সাথে একসাথে বসে চা খেয়ে আমি চিএার জন্য আনা সমস্ত শপিং বের করলাম। প্রতিটা শপিং হাতে নিয়ে চিএা অনবরত শুধু চোখের জল ছাড়ছিলো। পদ্মফুল হাতে পেয়ে খুশিতে যেনো চিএা কাঁদছিলো। ফেরার পথে চিএার শূন্য সিঁথিতে এক গাঁধা সিঁদুর পড়িয়ে আমি চিএার কপালে চুমো খেয়ে এলাম। রাত বারোটা বাজতেই চিএার রুমে প্রবেশ করতে হবে আমার। চিএাকে দ্বিতীয় বারের মতোন আপন করে নিতে হবে।

কিছুসময় পর বাড়িতে পৌঁছাতেই বাড়ির লোকরা আমাকে পেয়ে ভীষণ খুশি। মা আদরের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের মিষ্টান্ন এবং পিঠা পুলি খাওয়াতে ব্যস্ত। ভাই, বোনরা শর্মিষ্ঠার বিয়ের স্টেইজ ঘিরে হৈ, হুল্লোড়ে মগ্ন। অতিথি, মেহমানে সম্পূর্ণ বাড়ি গিজগিজ করছে। পাড়ার সমস্ত মেয়েরা কোমড়ে উড়না বেঁধে নাচছে। পাড়ার মুরুব্বিদের নিয়ে বাবা শর্মিষ্ঠার বিয়ের স্টেজ প্রদর্শন করছেন। সোফার এক কোণায় আমাকে দেখা মাএই বাবা গুরুগম্ভীর ভাব নিলেন। আমাকে সম্পূর্ণ এড়িয়ে গেলেন। আমার খারাপ লাগার বিষয়টা আঁচ করতে পেরে মা শেষ মিষ্টিটা আমার মুখে পুড়ে দিয়ে জোরপূর্বক হেসে বললেন,,

“শর্মিষ্ঠার বিয়েতে আগামীকাল চিএার দাওয়াত আছে জানিস?”

আমি মৃদ্যু হেসে জিগ্যাসু কন্ঠে বললাম,,

“সত্যি মা?”

“হ্যাঁ বাবা, সত্যি।”

মাথা নিচু করে হাসছিলাম আমি। চিএা তবে কাল আমার আনা শাড়ি, চুড়ি, গাজরা পড়েই বিয়েতে আসবে!

ঘড়িতে রাত ১ টা বাজতেই গাঁয়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হলো। বাড়ির সবাইকে আড়াল করে আমি চিএার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। পুরো পাড়া অলরেডি ঘুমে তলিয়ে পড়েছে। রাস্তা, ঘাটে কোনো জনপ্রাণীর দেখা নেই। একাকী নির্জনে হেঁটে আমি চিএাদের বাড়ির গেইটে পা রাখলাম। গেইটটা উন্মুক্ত অবস্থায় দেখে বুঝতে আর দেরি হলো না, চিএাই গেইটটা খোলা রেখেছে। চিএার রুমের দরজায় আলতো হাতে টোকা মারতেই চিএা রুমের দরজা খুলে বেরিয়ে এলো। তাড়াহুড়ো করে আমি চিএার রুমে ঢুকে দরজার খিল আটকে দিলাম। চিএা পিটপিটে চোখে আমার সম্মুখে দাঁড়িয়ে বলল,,

“১২ টায় আসবি বলেছিলি, এখন ক’টা বাজছে?”

আমি উর্ধ্ব আওয়াজে বললাম,,

“অনুষ্ঠান শেষ হতে দেরি হয়ে গেলো! আমি কি করব বল?”

চিএা আতঙ্কগ্রস্ত কন্ঠে বলল,,

“ইসস বাবা শুনবেন তো, আস্তে কথা বল না!”

আমি বাঁকা হেসে চিএার কাঁধে দু হাত ঝুলিয়ে চিএার ঠোঁটের দিকে খানিক ঝুঁকে বললাম,,

“কাকু সব জানেন। শুনলে ও মহা ভারত কিছু অশুদ্ধ হবে না!”

চিএা ভ্রু যুগল কিঞ্চিৎ কুঁচকে বলল,,

“মানে?”

“মানে, কাকুকে আমাদের বিয়ের ব্যাপারটা জানিয়ে দিয়েছি আমি। কাকু আমাদের সম্পর্কটায় সায় জানিয়েছেন।”

চিএা হাসল, মৃদ্যু হাসল, অতঃপর আমার কপালে দীর্ঘ চুমো খেয়ে বলল,,

“ভাবতে পারি নি, বাবা এতো সহজে সায় দিবেন।”

উত্তেজিত হয়ে আমি চিএাকে কোলে তুলে বিছানায় শুইয়ে দিলাম। উড়নাটা চিএার গাঁ থেকে সরাতেই আমি চিএার বুকের কাছটায় তিনটে নখের আঁচড় দেখতে পেলাম। কপালটা খড়তড়ভাবে কুঁচকে আমি চিএার দিকে চেয়ে বললাম,,

“কিসের আঁচড় এখানে?”

চিএা ইতস্তত বোধ করে শুকনো কন্ঠে বলল,,

“মমশা কামড়েছিলো। ঘুমের মধ্যেই নখের আঁচড় লেগে গেছে!”

“তাই বলে এতোটা ভয়ঙ্কর ভাবে আঁচড় পড়বে?”

“ঘুমের মধ্যে এতোটা ঠাওড় করা যায় নাকি? হয়তো লেগে গেছে কোনোভাবে!”

বিষয়টাকে অস্বাভাবিক দৃষ্টিতে দেখে আমি লাল হয়ে ফুলে থাকা আঁচড় গুলোর দিকে তাকিয়ে আছি। চিএা অস্থির কন্ঠে বলে উঠল,,

“ইসসস তুই কি এখন গোয়ান্দাগিরি করে পুরো রাতটা মাটি করবি? সহজ জিনিসটাকে স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারছিস না?”

চিএার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আমি অদ্ভুত এক ঘোরে ডুবে গেলাম। তৎপর হয়ে পড়লাম পুনরায় চিএাকে নিজের করে নিতে। সারা রাত চিএার সাথে কাটিয়ে আমি ভোরের দিকে বাড়ি ফিরে এলাম। স্নান সেরে নিশ্চিন্ত মনে গভীর ঘুমে তলিয়ে পড়লাম।

পর্ব সমাপ্ত

(গল্পটা ধৈর্য্য সহকারে পড়ার অনুরোধ রইল।)

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button