Game পর্ব ৬: মিমি মুসকান
পরদিন সকালে অভ্র তৈরি হয়ে যায় অফিসে। বাকি সবাই আজ বাসায়। কেউ কোথাও যাবে না, আজ সারাদিন শুধু মেহেরিন”কেই দেবে। সারাদিন ওরা সবাই মিলে গন্ডগোল করবে আর নিহা সব ঠিকঠাক করবে এটাই হলো প্ল্যান। এদিকে আনহা আজ ফুলের তোড়া নিয়ে এসেছে অভ্র কে সরি বলতে। অভ্র অফিসে ঢোকার সাথে সাথে তার মুখের সামনে ফুলের তোড়া তুলে ধরে। অভ্র সানগ্লাস নামিয়ে ফুলের তোড়া দেখে অতঃপর জিজ্ঞেস করে..
– কে?
আনহা কাঁপা কাঁপা গলায় বলে..
– স্যার আমি!
অভ্র এবার ফুলের তোড়া সরিয়ে মুখ দেখার চেষ্টা করে।দেখে এটা আনহা। অতঃপর শান্ত গলায় বলে..
– তুমি!
– সরি স্যার। আসলে সেদিন আমি ইচ্ছে করে কিছু করেনি। আমি জানতাম না এটা আপনি তাই! প্লিজ স্যার এবারের মতো মাফ করে দেন আর কখনো করবো না। চাকরি থেকে বরখাস্ত করবেন না দয়া করে!
– আচ্ছা আচ্ছা রিলেক্স! দম নিয়ে কথা বলো। তাড়াহুড়ো কিসের আমি অফিসেই আছি।
– জ্বি স্যার!
– কাজ বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে তোমাকে।
– হ্যাঁ স্যার। আমাকে সব বলে দেওয়া হয়েছে। দেখুন আমি আজকের রুটিন ও তৈরি করে ফেলেছি।
– রুটিন!
– হুম। আজকে আপনার দুটৌ মিটিং আছে, আর আমাদের দুই সাইডে কাজ চলছে সেটা দেখতে যাবেন। এছাড়া আমাদের ফ্যাক্টরিতে একটু যেতে হবে।
– ওহ্ আচ্ছা! আর কিছু।
– নাহ স্যার এরপর আপনার ও ছুটি আর আমারও।
অভ্র মুচকি হেসে বলে..
– তোমার ছুটি আমার না। আচ্ছা আমি একটা ফাইল খুঁজছি পাচ্ছি না হয়তো তোমার ডেস্ক এ একটু গিয়ে চেক করো।
– কি রঙের ফাইল স্যার, মানে দেখতে কেমন। কি বিষয়ে , মোটা না পাতলা।
– ব্লাক রঙের একটা ফাইল!
– মানে স্যার আমি বলতে চাইছিলাম কি..
– তোমার ডেস্ক এ শুধু ব্লাক রঙের একটা ফাইল’ই থাকবে। কারন সব ফাইল আমার কাছে বুঝেছো এবার যাও!
– ওহ্ আচ্ছা। স্যার ফুল’টা নেন তাহলে!
– এটা!
– হ্যাঁ এটা আপনার জন্য। আপনার রাগ ভাঙাতে এনেছিলাম। দেখেছেন আমার প্ল্যান কাজ করেছে। ফুল টা সুন্দর না স্যার।
– হ্যাঁ খুব সুন্দর!
– ধন্যবাদ স্যার। আমি এখন’ই যাচ্ছি আর এখন’ই আসছি।
– সমস্যা নেই ধীরে যাও।
– জ্বি স্যার!
অতঃপর আনহা ফাইল নিয়ে আবার আসে অভ্র এর কাছে। অভ্র ফাইল টা নিয়ে বলে..
– গিয়ে চেক করুন সবাই ঠিক ভাবে কাজ করছে কিনা।
– আর কোনো কাজ নেই আমার!
– আপাতত না তবে দরকার পড়লে আমি আবার ডাকবো আপনাকে।
– আচ্ছা স্যার!
আনহা বাইরে এসে বিড় বিড় করতে থাকে..
– স্যার এতো শান্তশিষ্ট কেন। আমি তো শুনেছি স্যার রা অনেক রাগী হয়, অনেক বকা দেয়। কিন্তু এখানে তো আমার স্যার খুব শান্ত। এটা কিভাবে হলো? যাই হোক এতে আমার ভালো। আমাকে না বকলেই চলবে হি হি হি
.
সন্ধ্যায়…
অভ্র সবে মাত্র অফিস থেকে ফিরেছে। পুরো বাড়ি শান্ত বলে একটু কেমন কেমন লাগছে ওর। মেহেরিন বাসায় তবুও সব এতো শান্ত ব্যাপারটা ঠিক হজম হচ্ছে না। বাড়িতে ঢুকেই প্রথমে আদুরী বলে ডাকতে থাকে সে। অতঃপর নিহা এসে ওর সামনে দাঁড়ায়। তার হাতে থাকা কাগজ গুলো অভ্র’র সামনে দেয়। অভ্র তাকিয়ে বলে..
– এগুলো কি?
– আপনার আদরের বোন আদুরীর কার্যকলাপ!
– মানে?
– পড়ে দেখুন।
অতঃপর অভ্র কাগজগুলো পড়তে শুরু করে। পড়ে সে অবাক হয়ে যায়। তাকিয়ে থাকে নিহা’র দিকে। নিহা বলে উঠে..
– হুম এটাই সত্য! আপনার বোন আজকে ওর ৩ বাঁদর বন্ধুকে নিয়ে আম চুরি করেছে, ফুটবেল খেলতে গিয়ে কারো মাথা ফাটিয়েছে তো কারো গাড়ির কাচ ভেঙেছে আবার কারো দোকানের মিষ্টি চুরি করেছে।
– এক দিনে এতো কিছু!
– তবে আর কি? এতো কমপ্লেইন আসতে দেখে আমি নিজেই অবাক।
– নিশি আর নীল!
– ওনাদের সাথে আজ খুব খেলেছে। অবশেষে তারা হয়রান হয়ে এখন ঘুমোতে গেছে।
– এই সময়! আদুরী কোথায়?
– কার্টুন দেখতে বসেছে।
– আদুরী আদুরী!
মেহেরিন এক দৌড়ে চলে আসল। অভ্র’র সামনে দাঁড়িয়ে বলল…
– দা! তুমি কখন এলে।
– মাত্র এসেছি কিন্তু তার আগে তুমি আমাকে বলো।
– কি বলবো?
অভ্র কাগজগুলো মেহেরিন কে দিয়ে বলে..
– এই গুলো তুমি করেছো।
মেহেরিন কাগজ গুলো পড়ে মাথা নাড়িয়ে না বলে। নিহা আর অভ্র ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে। মেহেরিন বলে উঠে..
– শুধু এতো টুকু না আরেকটা কাজ করেছি।
– আবার কি অঘটন ঘটালে!
মেহেরিন সোফায় গিয়ে বসল। অভ্র আর নিহা ওর পিছে পিছে গেল। নিহা বলে উঠে..
– আর কি করেছিস তুই!
মেহেরিন নিহা’র দিকে তাকিয়ে হেসে বলে..
– বেশি কিছু না একটা ফলের গাড়ি উড়িয়ে দিয়েছি তবে কেউ আহত হয় নি।
অভ্র আর নিহা হা করে তাকিয়ে আছে। নিহা মেহেরিন এর পাশে বসে পড়ে। অভ্র জিজ্ঞেস করে..
– এটা কিভাবে হলো?
মেহেরিন টি টেবিল থেকে একটা আপেল নিয়ে খেতে খেতে বলে..
– আসলে হয়েছিল কি আমি একটু ড্রাইভ করতে চেয়েছিলাম তো সেটাই করেছিলাম মন দিয়ে। কিন্তু হুট করেই একটা বেলুন ওয়ালাকে দেখলাম। জানো ওর কাছে একটা কালো বিড়ালের বেলুন ছিল। আমি সেটার দিকেই তাকিয়ে ছিলাম আর হুট করে ফলের গাড়ি’টা আমার সামনে এসে পড়ল আর অঘটন টা হয়ে গেল।
নিহা এক গ্লাস পানি খেয়ে বলে..
– আদুরী ফলের গাড়ি তোর সামনে আসে নি। বরং তুই ফলের গাড়ির কাছে চলে গেছিস।
– ওই একই। মিষ্টি কুমড়ে ছুরিতে পড়ুক বা ছুড়িতে মিষ্টি কুমড়া শেষে মিষ্টি কুমড়োই তো কাটবো নাকি।
– প্রবাদ বাক্য টা অন্যরকম ছিল না।
– হ্যাঁ তবে আমার মনে নেই। হি হি হি!
অভ্র মেহেরিন এর মাথায় হাত রেখে বলে..
– ড্রাইভ তুমি কেন করছিলে? ড্রাইভার কোথায় ছিল আর গার্ড। ডেভিল কোথায় ছিল। তোমার সাথে না ইহান ওরা ছিল তাহলে!
– আরে আরে একটা একটা করে বলো। একসাথে এতো প্রশ্ন কেন জিজ্ঞেস করো। বলছি বলছি! ডেভিল কাজ করছিল আমি ওর থেকে গাড়ি’র চাবিটা চুরি করে নিজে লুকিয়ে চলে যাই। খুব ইচ্ছে করছিল তো তাই। আর ইহান ওদের বলিনি কারন ওরা আমাকে একা যেতে দিতো না তাই!
– কারো ক্ষতি হয় নি তো!
– না না না কারো ক্ষতি হয় নি।
– কার ফলের গাড়ি উড়িয়ে দিয়েছো বলো জরিমানা দেওয়া লাগবে তো।
– হ্যাঁ জরিমানা ডেভিল দিয়েছে। যখন এক্সিডেন্ট হয়েছে তখন ডেভিল সেখানে চলে গেছিল পরে ও সব ঠিক করেছে। আমি সরিও বলেছি।
অভ্র মুচকি হেসে নিহা কে বলে…
– তুই আরো একবার দেখে সবার জরিমানা দিয়ে আসিস।
– হুম তোমার বোন কান্ড করবে আর আমি ঠিক করবো।
মেহেরিন বলে উঠে…
– হ্যাঁ এটাই তোমার একমাত্র কাজ।
– দেবো একটা। অন্যের জিনিস কেন চুরি করিস, কিনে নেওয়া যায় না।
– আরে চুরি করে খাওয়াতে একটা মজা আছে সেটা তুমি বুঝবে না।
– …
– এভাবে তাকানোর কি আছে। তবে আমি চুরি করলে কি হবে কি করে যে সবাই বুঝে ফেলে জানি না।
অভ্র বলে উঠে..
– তবে চুরি করা ভালো না এটা জানো না।
– কিন্তু আমি তো মূল্যবান কিছু চুরি করছি না। তাই না!
মেহেরিন’র মাথায় চুমু খেয়ে..
– যাই হোক এরকম আর কখনো করবে না।
– আচ্ছা দা শোন না!
– কিহ?
– আমার একটা কালো কিউট বিড়াল চাই!
– কিহহ বিড়াল!
– হ্যাঁ হ্যাঁ বিড়াল। ওই বেলুন ওয়ালা’র কাছেও বিড়াল ছিলো আমার কাছে নেই কেন? আমার ও বিড়াল চাই।
নিহা বলে উঠে..
– ওইটা বিড়াল বেলুন ছিলো।
– আচ্ছা বিড়াল তো। ওই দা এনে দাও না একটা কিউট কিউট কালো বিড়াল।
– বিড়াল আনবো পালবে কে?
– কেন আমি!
– আজ পর্যন্ত নিজ হাতে ঠিক করে খেতে পারো না তুমি আবার পালবে বিড়াল।
– দা ঠিক হচ্ছে না কিন্তু! আমার বিড়াল চাই মানে বিড়াল চাই ব্যস। তুমি আমাকে বিড়াল এনে দিবা।
– আচ্ছা এনে দেবো।
– সত্যি তো।
– হ্যাঁ বাবা সত্যি! আচ্ছা খেয়েছো!
– না তবে ভীষণ ক্ষুধা লেগেছে!
– নিহা!
নিহা মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে বলে..
– রান্না হয়েছে বাসায় যে খাবে!
– মানে!
– তোমার বোন রান্না করতে দেয় নি।
– কেন?
মেহেরিন বলে উঠে..
– রান্না করতে দেয় নি মানে তুমি তো রান্না করতেই জানো না। দা আমি বলছি দেখো তোমার এই বোন কে নিয়ে কতো জ্বালা হুম রান্না’ই করতে পারে না। শেষে তো কেউ বিয়েই করবে না! আমি একটু বলেছিলাম বিরিয়ানি খাবো বলে কি যে সার্ভেন্ট বানিয়ে দেবে ইশ নিজে বানাতে পারে না।
নিহা বলে উঠে..
– আচ্ছা আমার বোন আমি না সার্ভেন্ট দের রান্না করতে দেয় নি। হয়েছে এবার.., দা তোমার বোন তোমার হাতের রান্না খাবে। দয়াকরে রান্না টা করুন!
– হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক আছে। দা বিরিয়ানি খাবো।
অভ্র স্যুট খুলে বলে..
– বসো আমি ফ্রেশ হয়ে এসে বানিয়ে দিচ্ছি।
– আচ্ছা!
অতঃপর অভ্র ফ্রেশ হয়ে এসে বিরিয়ানি রাঁধতে শুরু করে। অবশ্য সে রান্না পারে।সব ধরনের রান্না করতে শিখেছে সে। নিহা আর নিশি এসে দাঁড়িয়ে আছে। মেহেরিন সোফায় বসে দুলতে দুলতে বলে..
– দি তোমরা বরং দাঁড়িয়ে থেকে শিখে নাও কিভাবে রান্না করে। ভবিষ্যতে লাগবে তোমাদের?
নিশি বলে উঠে..
– কেন লাগবে?
– ওমা বিয়ে করে শশুড় বাড়িতে গেলে লাগবে না বুঝি। তাদের রান্না করে খাওয়াবি না।
– কিন্তু আমরা তো বিয়েই করবো না তাই না দি!
– হ্যাঁ ঠিক বলেছিস!
মেহেরিন উঠে রান্নাঘরের কাছে এসে বলে উঠে..
– বিয়ে করবে না মানে? এখানে থাকবে আজীবন..
অভ্র বলে উঠে..
– থাকলেই বা দোষ কি আদুরী! আমার বোন সারাজীবন থাকবে আমার কাছে। বিয়ে না হলে কি মানুষের জীবন চলে না নাকি!
– আমি তা বললাম কখন! কিন্তু দি তোমাদের বিয়ে না হলে আমি বিয়ে খাবো কিভাবে?
– বিয়ে আবার খাই কিভাবে?
– কেন তুমি শোন নি মানুষ বিয়ের দাওয়াত খেতে যায়!
নিশি মেহেরিন এর মাথায় টোকা মেরে বলে..
– ওটা বিয়ের দাওয়াত হবে সেটা বল!
– আরে শর্ট ফ্রম বুঝো না।
অভ্র বলে উঠে..
– আচ্ছা হয়েছে যা ওদের ডেকে নিয়ে আয় খাবার তৈরি, খেতে হবে।
– আচ্ছা।
বলেই মেহেরিন দৌড়ে চলে যায়। অভ্র, নিহা আর নিশি টেবিলে খাবার সার্ভ করতে থাকে তখন নীল, ইহান, রোদ্দুর আর কাব্য এসে হাজির হয়। সবাই ভিজে একাকার! অভ্র অবাক হয়ে বলে উঠে..
– তোদের এই হাল কেন?
নীশ বলে উঠে..
– আদুরী করেছে!
– আদুরী কিন্তু কেন?
মেহেরিন বলে উঠে..
– তুমি না বললে ঘুম থেকে উঠানোর জন্য!
– তাই বলে এভাবে!
– আরে ওরা অনেক গভীর ঘুমে ছিল আমি ডেকেছি অনেকবার কিন্তু উঠেনি তাই সবাইকে এক বালতি পানি ঢেলে ঘুম থেকে জাগিয়েছি!
ইহান বলে উঠে..
– কই তুই তো ডাকিস নি?
– আরে ডাকলে তোরা উঠতি না তাই আমি আগেই পানি ঢেলে দিয়েছি। ভালো করেছি না দা!
এদিকে নিশি ওদের অবস্থা দেখে মুখ টিপে হাসতে থাকে। অভ্র জানে মেহেরিন এটা ইচ্ছে করেই করেছে। তাই বলে উঠে..
– আচ্ছা যা হবার হয়েছে তোরা চেঞ্জ করে আয় নাহলে ঠান্ডা লেগে যাবে।
কাব্য বলে উঠে..
– পুরো বিছানা ভিজে একাকার! রাতে ঘুমাবো কিভাবে?
মেহেরিন বলে উঠে…
– এতোক্ষণ ঘুমানোর পরেও তোদের আবার ঘুমোতো যাওয়া লাগবে!
রোদ্দুর বলে..
– খুব মজা লাগছে না তোর! দেখিস আমাদের সময় ও আসবে।
দাঁত বের করে হেসে বলে…
– আচ্ছা!
পর্ব সমাপ্ত