প্রভুর বাণীশিক্ষা

আল কোরআন মুখস্ত করার সহজ নিয়ম

✒ হাফেজ আলি আকবর



পুরো বিশ্বে একটি মাত্র গ্রন্থ, আল কোরআন। যা হাজারো মানবের মুখস্থ। এমন কোনো নজির আর কোনো বইয়ে নেই। এটা মুসলিমদের প্রধান ধর্ম গ্রন্থ। মুসলিম ছাড়া অন্য জাতিরা এটা নিয়ে পড়াশোনা করেন। এই মহান গ্রন্থটির একটি হরফ পড়লে দেশ নেকি পাওয়া যায় বলে বর্ণনা রয়েছে। আর এটার হিফয করলে পরকালে আরো বড়ো ধরনের পুরস্কারের কথা রয়েছে । একজন হাফিজে কোরআন তার পরিবার থেকে এমন দশ ব্যাক্তিকে জান্নাতে নেয়ার সুপারিশ করতে পারবে যাদের জাহান্নাম নির্ধারণ হয়েছে। এছাড়াও একজন হাফেজে কোরআন পরকালে কোরআনের আয়াত সংখ্যার পরিমাণ বিশিষ্ট একটা বাড়ি পাবে। এসব ফজিলত আর মান-মর্যাদা ও মহান প্রভুর খুশির উদ্দেশ্য অনেক মুসলিমদের মনে স্বপ্ন কোরআনের হাফেজ হবে। তবে আগে জেনে নিতে হবে কোন নিয়মে হিফয করতে হয়,এবং সঠিক ও সহজ নিয়ম।


  • প্রথমেই বলবো

কোরআন হিফয করতে কোনো বয়স নির্ধারিত নয়। নবীজির কাছে পর্যায়েক্রমে অল্প অল্প করে নাজিল হয়েছে তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। তাই বলতে পাড়ি তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মুখস্থ করেছেন। সাথে সাহাবায়েকেরাম ও। শুধু নিজের আত্মবিশ্বাস ও আগ্রহ থাকা দরকার। তাহলেই সকলের ধারা সম্ভব। চাইলে যাঁরা স্কুল কলেজে পড়ে ও পড়ছেন বয়স্ক, যুবক  তাঁরাও হিফয করতে পারবেন ।

 


  • নাজারা

প্রথমে নাজারা পড়তে হবে ভালোভাবে। নাজারা মানে রিডিং দেখে দেখে চালু করতে হবে। যে যত চালু পড়তে পারবে হিফয ততই সে তাড়াতাড়ি এগুতে পাড়বে। নাজারা পড়ার সময় তাজবিদ সহকারে হরফগুলো মজবুত ও স্পষ্ট সহকারে পড়া শিখতে হবে। কারণ হরফ উচ্চারণ অস্পষ্ট থাকলে ইয়াদ মানে মনে রাখতে অসুবিধা হবে। আর স্পষ্ট পড়ার জন্য প্রথম অবস্থায় কয়েক পাড়া বা কিছু অংশ মাস্কের মাধ্যমে পড়বে। তাহলে সুবিধা হবে। তার জন্য সহজ পদ্ধতি হলো যারা মাদ্রাসায় পড়ে তারা কয়েকজন মিলে ব্যাস তৈরী করে ঘুরে ঘুরে এক একজনের মাস্কের মাধ্যমে পড়লে আরো সহজ হবে। আর যারা জেনারেল তারা নিজ আগ্রহে পড়বে একা একা। অবশ্যই তার পড়া শোনার জন্য কাউকে প্রয়োজন হবে।

 


  • সবক

যখন পুরো কোরআান চালু হয়ে যাবে তখন ছবক পড়বে মানে মুখস্থ শুরু করবে, আর এই মুখস্থ করাকেই ছবক বলে। নিজের টার্গেট অনুযায়ী ও সাদ্য মতো পড়বে। ছবক পড়ার কিছু নিয়ম ও সময় আছে নির্ধারিত।সবক পড়ার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় মাগরিব থেকে এশা পর্যন্ত। এমন নয়যে এ সময় ছাড়া পড়া যাবেনা মানে এই সময়টা উপযুক্ত বেশি। সবক পড়ার আগে আছরের আগে যতটুকু সবক পড়বে ততটুকু এক আয়াত করে মুখস্ত করে নিবে। তবে সাবধান থাকতে হবে ভুলেও মিলানো যাবে না। আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত হাঁটা-চলা, ব্যায়াম ও ঘোরাঘুরি করবে। মাগরিবের পড়ে এক খেয়ালে নিরব জায়গায় এক আয়াত করে মুখস্ত করবে আবার পিছনের আয়াতের সাথে মিলিয়ে পড়বে। এভাবেই মিলাতে মিলাতে পুরো পৃষ্ঠা শেষ করবে। সবক  সুন্দর ও ভালোভাবে পড়তে হবে। সবক পড়ার সময় কোনো প্রকার কৃপণতা ও অলসতা করা যাবে না। এর পড়ে কাউকে শুনাতে হবে। যেটাকে বলা হয় দাউর। নিজের অবিজ্ঞতা থেকে বলবো আমি যখন হিফয পড়ি তখন কয়েক লাইন মুখস্থ করার পড়ে মাথা ব্যাথা শুরু হতো। যার কারনে ভালোভাবে সবক মুখস্থ করতে পারতাম না।  যেদিন বেশি খারাপ হতো সেদিন ক্লাসের একমাথা থেকে ছাত্রদের শুনানো শুরু করতাম অন্য মাথায় গিয়ে থামতাম। বড়ো ছোটো পিছকি পুচকে দেখে না দেখে আটকিয়ে আটকিয়ে এক পৃষ্ঠা ১০ থেকে ১৬ বারো শুনতাম। অতিরিক্ত শুনানোর ফলে ভোর রাতে কোনো সমস্যা হতো না উস্তাদকে সবার আগে আমিই শুনাতাম প্রভুর দয়ায়। তাই বলবো সন্ধ্যা রাতে বেশি বেশি সবক শুনাবে। দরকার হলে দেখে দেখে তবুও বেশি শুনাবে আশা করছি ভালো ফলে পাবে। পাড়লে এশার নামাজে ও তাহাজ্জুদে সবক তেলাওয়াত করবে এতে করে ইয়াদ ও সাত ছবকের উপকার হবে। সবক দেয়ার সময় কোনো বাধা লোকমা থাকবে না। একটানা ফর ফর করে দিতে হবে।

সাত ছবক হলো তুমি যেই পাড়া ছবক পড়ো ঐ পারার শুরুর পৃষ্ঠা থেকে সবকের পৃষ্ঠা পর্যন্ত হলো সাত ছবক। বুঝার জন্য উদাহরণ হিসেবে বলবো আজকে মাত্র প্রথম ছবক শুরু হয়েছে তার মানে আজকে পাঁচ পৃষ্ঠা ছবক দেয়া হয়েছে। এই পাঁচ পৃষ্ঠা আগামী কাল সাত ছবক। আশাবাদী বুঝাতে পেরেছি। এই পাঁচ পৃষ্ঠার সাথে কালকের সবক এড করে শুনাতে হবে। উল্টো করে। পারা শেষ পর্যন্ত। প্রতিদিন সাত ছবক শুনানোর পড়ে ঐ দিনে যে পৃষ্ঠা ছবক দেয়া হয়েছে ঐ পৃষ্ঠা টি না দেখে পাঁচ বার তেলাওয়াত করবে। প্রতিবার ক্লাসে বসার সময় পাঁচ বার তেলাওয়াত করবে আমুখতা দেয়ার পড়ে পাঁচ বার তেলাওয়াত করবে। এভাবে দৈনিক তেলাওয়াত করলে সাত ছবক ও ইয়াদের সুবিধা হবে। বিশ্বাস না হলে ট্রাই করে দেখে পারেন। প্রতিদিন ঘুমের আগে সাত ছবক নামাজে তেলাওয়াত করে শুবে। অবশ্যই সাত ছবক সকাল সাতটার আগে ক্লিয়ার করতে হবে।

 


  • আমুখতা

আমুখতা হলো মোট মুখস্থকৃত পাড়া থেকে দৈনিক ১ পারা করে শুনানো। ইয়াদ রাখার জন্য আমুখতা সঠিক নিয়েমে আদায় করতে হবে। আমুখতা দিতে না পারলে সবক পরবে না। আবার পিছনের পারা ইয়াদ করে তারপর সবক শুরু করবে। আমুখতা এবং ছবক সাত ছবক সবকিছুই দাড়িয়ে শুনাবে ।


  • সবিনা 

সাবিনা হলো বৃহস্পতিবার পুরো সপ্তাহে যতটুকু আমুখতা শোনানো হয়েছে বা যতটুকু ইয়াদ করা হয়েছে সেই পারা গুলো পড়া।কা

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button