স্বপ্ন – লিটন রায়
আজ মনটা ভীষণ খারাপ! নিজেকে নিয়ে হঠাতে খুব চিন্তিত হয়ে পড়লাম। আমার বাবা একজন গরিব খেটে খাওয়া মানুষ। আমার চাহিদার প্রয়োজন মত অর্থ দিতে পারেননি তিনি। তাই আমার অনেক স্বপ্ন, ভেঙে দুমড়ে মুচড়ে ধূলিসাৎ হয়ে যায়_ অনেক আশা বুকের মধ্যে চেপে বেঁচে আছি। একদিন ঠিকই পূরণ হবে। কিন্তু বিচলিত মনকে আর কত সান্ত্বনা দিব।
বাড়িতে বাবার সেই ছোট্ট আদরের খোকা আর নেই। বড় হয়ে গেছি। মানুষ হতে পারিনি। বাবার বোঝা হয়ে আছি। এ নিয়ে রোজই কথা শুনতে হয় আমাকে। আর কত বসে বসে খাবো। মাঝেমধ্যে কাজে যাওয়া হয়। কিন্তু কাজ করে খুবই ক্লান্ত হয়ে পড়ি। আর বই পড়তে ইচ্ছে করে না।এভাবে না পড়ে, না পড়ে, বই খুলতেই ভুলে গেছি।
তবে_আজ নিজেকে নিয়ে ভাবছি। ভাবছি! জীবনে কী করবো? কী হবে আমার দ্বারা? আমি কি এই সমাজে সত্যিই কিছু দিতে পারবো? বাবার মনে কি একটু স্বস্তি দিতে পারবো? মায়ের মুখে একটু হাসি?
ভাবতে ভাবতে সব দোষ বাবাকে দিতে লাগলাম। ইস্! বাবা যদি আজ ওমুক কী তোমুক এর মত আমায় একটা ভালো স্কুলে পড়াতো,ভালো একটা কলেজে! ভাবছি ভার্সিটি কোচিং এর জন্যে যদি শহরে পাঠাতো। তাহলে হয়তো জীবনে কিছু করতে পারতাম।
কিন্তু বাবা যে নিরুপায়! বাবারও ইচ্ছে আছে ছেলেকে বড় করবে। এজন্য বাবাকে খুব ভালোবাসি।
কিন্তু বাবার প্রতি আমার খুব অভিযোগ! খুব রাগ!অভিমান আমার! _কেন? কারণ,বাবা আমায় অন্যদের সাথে কথায় কথায় তুলনা করে। যেটা আমার খুবই বিরক্ত লাগে। এসব ভাবছিলাম চোখ বুঝে।
তারপর কখন যে ঘুমিয়ে গেছি টেরই পাইনি। কিন্তু ঘুমের মধ্যে একটা স্বপ্ন দেখছি। স্বপ্নে দেখলাম আমি একটি অজানা শহরে। সেখানে দেখলাম সবচেয়ে উঁচু ভবনের কাজ করা চলছে। আমি দেখছি_ আর এই ভবন উঁচু হওয়ার কারণ ভাবছি। এর কারণ হলো সবচেয়ে বেশি নিচে এই ভবনের ভিত্তি দেওয়া আছে। তাই এই ভবন বেশি উঁচু।কিন্তু কাজ চলাকালীন অনেক তাজা প্রাণ গেছে!কত রক্ত! কত পরিশ্রম! পরিশেষে ভবনটি নির্মাণ হয়েছিল। মোট কথা, যে যত নিচে সে তত উপরে উঠতে পারে। যদি তার মধ্যে একটু ত্যাগ, প্রচেষ্টা,সাহস, আন্তরিকতা ও একটা বড় স্বপ্ন থাকে তাহলে সে বড় হতে পারবে।
তারপর আমিও আমার সব অভিযোগ বাবার উপর থেকে তুলে নিলাম। নিজের প্রতি বিশ্বাস বাড়াচ্ছি, আর একটা বড় স্বপ্ন দেখছি। আর সেই স্বপ্ন পূরণ করতে চেষ্টা করছি।