গল্প
Trending

ভূতেরা করে আম চুরি

নাজিয়া তুল ফাতাহ 

মৌটুসি গ্রামের সব দুষ্টু মেয়েদের সরদার। সারাদিন হই হুল্লোড়। খেলার সাথীদের সাথে সকাল সন্ধ্যা মাঠে দৌড়াদোড়ি, গোল্লাছুট, কানা মাছি, রুমাল চোর খেলায় মেতে থাকা এক কন্যা। গ্রীষ্মেকাল, খা খা রোদ্দুর। গা পুরে যায়। কি ভিষন গরম। পুকুর থেকে গোসল ছেরে আর উঠতেই ইচ্ছা হয় না। যেহেতু গরম কাল আম, জাম, লিচু, কাঠাল এ ভরপুর এক মৌসুম। রায় বাড়ির বাগানে আম গাছে আম থোকা থোকা ঝুলছে। ওই দিকে নজর গেলো মৌটুসীর। যেই ভাবা সেই কাজ। মৌবাহিনী অর্থাৎ মৌটুসীর বাহিনী সকাল ১১ টায় এক গোল মিটিং বসালো। মিটিং এ রায় বাড়ির বাগানে পাচিল টপকে বাগানের ভিতর ঢুকার পরিকল্পনা চলছিলো। তাদের পরিকল্পনা মাফিক প্রথমে কাগজে এক নকশা বানালো, ছবি আকলো, এই যে রায়বাহাদুর এর বাড়ি, তার কুড়ি হাত পরেই বাগান, প্রাচীর ঘেরা বাগান, বাগানের মধ্যে পাচিল টপকালে বড় গাছ, সে গাছে উঠে আম পাড়া হবে। আম একজন ছিড়বে, এবং পাচিলের অন্য পারে টুপুস টাপুস ছিড়ে ছিড়ে ফেলবে, এরপর জমা করবে। তারপর তো ইতিহাস। ইতিহাস মানে মিষ্টি রসালো আম, খেতে কি মজা!  ভাবতেই জিবে জল চলে আসলো সবার। পরের দিন বিকাল ৫ টায়, রাতুল পাচিল টপকে বাগানের ভিতর ঢুকলো, এবং গাছে চড়ে বসলো। এক টার পর একটা আম ছিড়ে নিচে ফেলছিলো। অন্যরা আম গুলো জমা করছিলো। বিশ পঁচিশ টা আম ছিড়ার পর, মৌটুসী বলল, রাতুল নেমে আয়। রায় বাবুদেরকেউ খেতে দে। নেমে পরলো রাতুল। পরের দিন সকালে গ্রামে হট্টগোল বেধে গেলো, কে বা কারা রায় বাহাদুর এর বাগান থেকে আম চুরি করেছে। গ্রামের ব্রেকিং নিউজ, রায়বাহাদুরের বাগানে ডাকাতি হয়েছে। রায়বাবু তো হায় হায় করছে। এদিকে মৌবাহিনী ইচ্ছে মতো আম খেয়ে পেট ঢোল। মৌটুসি, “কিরে প্রিয়া এবারের আম গতবারের চেয়েও ভালো, কি বলিস?” প্রিয়া বলল “সে আর বলতে, ভিষণ মজা “। রহিম দৌড়ে দৌড়ে এদিকেই আসছে, মোটুসী বলল, ” রাতুল, এ বেটা দৌড়ায় কেন রে? ” রহিম বলল, মৌটুসী আপু, সর্বনাশ হয়েছে। কি হয়েছে? বলল মৌটুসী। রহিম বলল ” রায়বাবু বাগানের সব আম বিক্রি করে দিচ্ছে, যে করেই হোক আটকাতে হবে, নইলে আমরা আম না খেতে পেয়ে মারা পরবো।” মৌটুসী বলল ” ঠিক বলেছিস, তিনটায় কবরস্থানের পাশের মাঠে মিটিং আছে, সবাই জয়েন করবি, জরুরি বৈঠক। মনে থাকে যেনো৷ ” বিকালে সবাই জড়ো হলো, মৌটুসী বলল, আমরা কিছুতেই আম বাগান বিক্রি হতে দিবো না। এখন কি করা যায়? রাতুল বলল ” সত্যি তো কি করা যায়, আমরা রায়বাবুকে বোঝাবো, বাগানের আমে পুষ্টি অনেক, সেটা কেনো বাইরের লোকে উপভোগ করবে? নিশ্চয়ই এটা উচিত না।” মৌটুসী বলল, “আরে না, শুনো, সবাই৷ উহুম উহুম, দু বার কেশে নিয়ে ” আমরা রায়বাবুর আম বিক্রি করার ভূত টা মাথা থেকে সরাবো “। প্রিয়া বলল, ” ভূত!” এইতো আইডিয়া পেয়েছি, মাথা থেকে ভূত সরাবো ভূত সেজে। “৷ মৌটুসী বলল ” বুঝে গেছি! “। ওকে আজ রাত আট টায় আমরা রায়বাবুর গাছে চরবো ভূত সেজে, এই জন্য যা যা লাগবে, দুইটা সাদা ফ্রক, আর একটা সাদা পাঞ্জাবী, এক টা পাতিল, ভুতের মুখ আকা, অথবা সাদা পাওডার একটু বেশি পরিমানে, লাল লিপস্টিক মোটা করে ঠোটে, কাজল চোখ সহ ঘন করে চোখের আশে পাশে, চুল গুলো ছড়ানো থাকবে, সেই সাথে থাকবে বাতাস। এটা প্লান করার পর, রাত আট টায় রায় বাগানের পাচিল টপকে গাছে চড়ে বসলো, মৌটুসী, প্রিয়া আর রাতুল ভূত সেজে। এদিকে রহিম রায়বাবুকে ডাক দিলো৷ বলল বাগানে চোর এসেছে৷ রায় বাবু টরচ নিতে চাইলে, রহিম নিষেধ করে বলল, আলো আনলে চোর পালাবে যে৷ রায় বাবু গেলো আম গাছের নিচে। গাছের উপর থেকে মৌটুসী আর প্রিয়া জোরে জোরে হাসতে লাগলো, রাতুল বলল, ” এ গাছ আমাদের, এ গাছের একটা আমও যদি বিক্রি হয়, রায়বাবু তোর মন্ডু কেটে আমি কেক বানিয়ে মজা করে খাবো ” রায়বাবু সূরা দূরদ দোয়া পড়তে শুরু করলো। ভয় পেয়ে বলল ” তাই হবে, তাই হবে, আম কোথাউ বিক্রি হবে না, এ জন্মেউ না, পরের জন্মেউ না “, তাই বলে ভো দৌড়। তারপর ওরা গাছ থেকে নামতে যাবে এমন সময় রাতুল পা পিছলে গাছ থেকে পরে গেলো। এবং পা ভেংগে গেলো। এর ফলে ওদের অভিভাবক বেশ কড়া রাগ রাগি করলো। রাতুল বলল ” উহ আহ, আমি আর আম খাবো না”! মৌটুসী বলল আস্তে আস্তে “ইশ!  আম আনলে গপাগপ একাই পাচ জনের আম খেয়ে ফেলবে! আম খাবো না, আল্লাদে গদো গদো! ” মৌটুসী বলল, রাতুল তোর তো এখন শক্তির দরকার, পুষ্টি ভিটামিন এর দরকার, আম এনেছি, খাবি না? ” রাতুল বলল ” হ্যাঁ খাবো”৷ সবাই হো হো করে হেসে দিলো।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button