সম্পাদকীয়

রিকশা চালিয়ে পরিক্ষা দিয়ে জিপিএ ফাইভ পেয়েছে দুই ভাই

আমাদের বিবেক কোথায়?  কোথায় আমাদের গল্প? কিভাবে দেখি নিজের মুখ নিজে? মাঝে মাঝে মনে হয় আমাদের বিবেক আমাদের বুদ্ধি ও জ্ঞান কে  তেলাপোকায় খেয়ে ফেলেছে। অথবা কাকে থাবা দিয়ে নিয়ে গেছে।সম্প্রতি ২০শে ডিসেম্বর বাংলাদেশের এন টিবিতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ পায়। সেখানে দেখা যাচ্ছে দুই আপন ভাই তাদের জীবন সম্পর্কে বলেছেন। রিকশা চালিয়ে জিপিএ ফাইভ পাওয়ার গল্প । এন টিবি (ক্লাসের সবচেয়ে মেধাবী দুই শিক্ষার্থী রিকশাচালক)   এই শিরনামে প্রতিবেদন টি প্রকাশ করেছে।

মিনহাজুল ইসলাম আবেদিন ও তৌহিদুর রহমান একি পরিবারের দুই ভাই। সিরাজ উদ্দিন সরকার স্কুলে, টঙ্গী, গাজীপুর পড়াশোনা করেন। তৌহিদুর রহমান কে দাবী করতে দেখা যায় সে ক্লাসের ফাস্ট বয়। তার ভাই সেকেন্ড বয়। কিন্তু উভয়জনই রিক্সা চালক। নিয়মিত ক্লাস করে ও রিক্সা চালিয়ে মিটাচ্ছেন পড়াশোনা ও পরিবারের খরচ। ভিডিওতে বলতে শোনা যায় এসএসসি পরিক্ষার আগের রাতেও রিকশা চালিয়েছেন। সকালে ঘুম থেকে ওঠে আবার পরিক্ষা দিয়েছেন। জিপিএ ভাইভ ও পেয়েছেন। তারা জানান তার বাবা অসুস্থ। তার বাবার আগে গার্মেন্টস ছিল। কিন্তু সেখানে লস খাওয়ার পড়ে উল্টো এখন আরো দেনা হয়েছেন। তাই তাদের রিকশা চালিয়ে পরিবার ও পড়াশোনার খরচ মিটাতে হয়। পড়াশোনার পাশাপাশি রিক্সা চালানোর জন্য হেয় প্রতিপন্ন হয়েছে কি-না এমন প্রশ্ন আসলে তারা জানান প্রথম আমাদের লজ্জা হতো কেউ দেখলে কি হবে কি বলবে!  কিন্তু এরকম কিছুই হয়নি  কেউ কিছুই বলেনি।

মাজে মধ্যে আমাদের স্কুলের টিচার রা আমাদের রিকশায় চলাচল করে। তাদের দেখলে প্রথমে আমরা সালাম দিতাম আর বলতাম আমি আপনার বিদ্যালয়ের ছাত্র। স্কুলের ছাত্রদের সাথে দেখা হলে কেউ কেউ কাছে এসে জিজ্ঞেস করতো তুমি অমক নয়?  কিন্তু এখন সব ঠিক হয়ে গেছে। এখন সবাই আমাদের জানে ও আলোচনা করে। মিনহাজুল ইসলাম বলেন দিনে স্কুলে ক্লাস করি আর রাতে রিক্সা চালাই। পড়ার সুযোগ হয়না। পকেটে করে কাগজে লিখে নিয়ে যাই যখন যাত্রী থাকে না তখন বের করে পড়ি।এগুলো কোনো বানানো গল্প লিখিনি দেখে আসতে পারেন এন টিভির ইউটিউব চ্যানেলে।

শুধু আমি এতটুকু বলবো আমরা ভুল কিছু করছি। আমাদের কি করা উচিৎ আর আমরা কি করছি?  একবার ভাবার ও প্রয়োজন বোধ করি না। যখন এই দুই ভাই রিক্সা চালিয়ে নিজেদের পড়াশোনা ও পরিবারের খরচ যোগার করছে তখন আমরা পড়াশোনা ও কাজ কর্ম বাদ দিয়ে খেলা নিয়ে ব্যাস্ত ছিলাম। কত সময় নষ্ট করেছি অথচ কেউ পায়নি সেই সময়। কত টাকা অপচয় করেছি প্রিয় টিমের সমর্থক হিসেবে নিজেকে ফুটিয়ে তোলার জন্য। অথচ সেই অর্থ এসব মানুষের পাওনা ছিল। কিন্তু পতাকায় আমরা সেসব গগনে উড়িয়ে দিয়েছি। আমাদের সময় সঠিক ভাবে ব্যায় করা উচিৎ  আমাদের অর্থ এসব পথের মানুষের পিছনে খরচ করা উচিৎ । এটা তাদের পাওনা । এখন আমাদের কর্তব্য হচ্ছে পড়াশোনা ও পথের মানুষের দিকে খেয়াল করা। জ্ঞানীদের জন্য অল্প কথাই যথেষ্ট।

 


লিখেছেন 

আবুল হাসান বাউফলী 

প্রতিষ্ঠাতা ও প্রকাশক মু্ক্তকথন

Related Articles

Back to top button