খোলা মতামত

মিথ্যা ফেব্রুয়ারী – ইবনু মাসউদ

 বছরের দ্বিতীয় মাসের নাম :ফেব্রয়ারী। এ মাস ভাষার মাস। বাংলা ভাষা রক্ষায় প্রাণ দেওয়া সালাম, বরকত,রফিক, জব্বারের মৃত্যু এ মাসেই। ভাষার মাসকে কেন মনে হচ্ছে :মিথ্যা ফেব্রুয়ারী? তা সবার শেষে বলছি।
প্রতি ফেব্রুয়ারিতে পালন করা বেশ কিছু দিবস নিয়ে ইতিহাস উল্লেখ করা হলো:
১.রোজ ডে: জনমনে কথিত আছে,ফেব্রয়ারী মাসের ৭ তারিখে রোজ ডে। রোজ ডে নিয়ে কোনো ইতিহাস নেই। যা বলা হয়ে থাকে তার সারমর্ম:রোজ নামের মেয়ের স্বামী প্রতি ভ্যালেন্টাইন ডে তে ফুল উপহার দিত। রোজের স্বামী মারা যাবার পর ও প্রতি ভ্যালেন্টাইন ডে তে ফুল উপহার আসত৷ ঘটনার এক পর্যায় জানা যায়:মৃত্যুর আগে দোকানদারকে রোজের স্বামী ফুলের টাকা ও একটি চিঠি দিয়ে যায়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রোজ ডে পালন করা হলেও এ ঘটনার কোনো ভিত্তি নেই। অনেক চেষ্ঠার পর ও এ ঘটনার কোনো তথ্যসূত্র মিলেনি। তাই ইতিহাসবিদরা বলেন:এ রোজ ডে মিথ্যাচার! তা নিয়ে কোনো ইতিহাস নেই।
২.প্রপোজ ডে: প্রেমিক-প্রেমিকার প্রেম-নিবেদনকে ঘিরে পালিত হয় প্রপোজ ডে। রোজ ডে নিয়ে একটি মিথ পাওয়া গেলে ও প্রপোজ ডে নিয়ে কোনো তথ্য ইতিহাস জানে না। এ সমাজের নোংরা কিশোর-কিশোরীরাই জানে :৮ ফেব্রুয়ারী প্রপোজ ডে। কেন প্রপোজ ডে? তার উৎস কি?তা কোথাও পাওয়া যায়নি।
৩.চকলেট ডে:৯ ফেব্রুয়ারিতে চকলেট ডে নামের বেহায়াপনা বাংলার সমাজকে কলুষিত করছে। এই চকলেট ডে নিয়েও কোনো সঠিক ইতিহাস কারো জানা নেই। একটি অনলাইন জার্নাল থেকে চকলেট ডে সম্পর্কিত চুম্বকাংশ তুলে ধরা হলো:ভিক্টোরিয়ান যুগে রিচার্ড ক্যাডবেরি নামে এক চকোলেট-বিক্রেতা হার্ট-শেপড বাক্সে চকোলেট ভরে বিক্রি করতেন ভ্যালেন্টাইন উইকে। সেখান থেকে মনের মানুষকে চকোলেট উপহার দেওয়ার রীতি দেখতে দেখতে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
৪.টেডি ডে:
টেডি ডে নিয়ে কোনো ইতিহাস পাওয়া যায়নি। তবে,টেডি -বিয়ার এর জন্ম নিয়ে ইতিহাস আছে। টেডি ডে আর টেডি-বিয়ার এর জন্ম প্রসঙ্গ এক না।
৫.প্রমিজ ডে:সম্পর্ককে প্রতিজ্ঞার মাধ্যমে মজবুত করার লক্ষ্যে ফেব্রয়ারীর ১১ তারিখে পালিত হয় প্রমিজ ডে। প্রমিজ ডে সম্পর্কিত অনেক কথা তথাকথিত জ্ঞানী নামের দালালরা লিখে থাকলে ও তা সব আবেগের কথা। প্রমিজ ডে নিয়ে কোনো ইতিহাস নেই।
৬.হাগ ডে: প্রেমিক-প্রেমিকা নামে বেহায়াপনার চরম অশ্লীলতা তথা তরুণ-তরুণীর কোলাকুলিতে পালন করা হয় ‘হাগ ডে। বাংলাদেশে ফেব্রুয়ারীর ১২ তারিখ হাগ ডে পালন করা হয় । দু:খের বিষয় হচ্ছে ;ইতিহাস বলছে ভিন্ন কথা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২১ শে জানুয়ারি হাগ ডে পালন করা হয়। যা নিয়ে লেকমুখে অনেক কথা প্রচলিত। ২১ শে জানুয়ারির হাগ ডে বাংলাদেশে ১২ ফেব্রয়ারী পালন করা হয়।
৭. কিস ডে:দুই জন মানুষের ঠোঁটসহ মুখাবয়ব নিবিড়ভাবে ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠার মধ্য দিয়ে নাকি মানব শরীরের আত্মার একত্রীকরণের পথ সহজ হয়ে ওঠে।
এমনটি বলেই বেহায়াপনার পথ সুগম করার লক্ষ্যে কিস ডে এর সূচনা। কিস ডে নিয়ে বেশ কিছু ইতিহাস আছে। কিস ডে মূলত প্রতি বছর ৬ জুলাই পালিত হয়। কিন্তু বাংলাদেশে দেখা যাচ্ছে কিস ডে পালিত হয় ১৩ ফেব্রুয়ারী।
৮.ভ্যালেন্টাইন ডে:প্রতি বছর এই দিনকে ভালোবাসার নামে কত মেয়ের নামের পাশে উহ্য করে লেখা হয়:ধর্ষিতা। এই দিনটিকে ধর্ষিতা দিবস দিলে ভুল হবে না। ২৬৯ সালে রোম সম্রাট দ্বিতীয় ক্রাডিয়াস সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামের এক খিষ্ঠান পাদ্রীকে বন্দী করেন। অভিযোগে বলা হয়ে থাকে: এ পাদ্রী অবৈধ শারীরিক সম্পর্কিত বড় ধরনের অপরাধী। কারাভোগের সময় জনৈক কারারক্ষীর অন্ধ মেয়েকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলেন সেন্ট ভ্যালেন্টাইন.। সেন্ট ভ্যালেন্টাইন এর কুচরিত্র ছাড়েনি অন্ধ মেয়েটিকে। ইতিহাস বলছে:অন্ধ মেয়েটির সাথে ও অবৈধ সম্পর্ক ছিল সেন্ট ভ্যালেনটাইনের। অন্ধ মেয়েকে সুস্থ করার ফলে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন তুমুল জনপ্রিয়তা পান। যার ফলে,রাজা পাদ্রীর প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যুদন্ড দেন। সেই দিন ১৪ই ফেব্রুয়ারি ছিল। অতঃপর ৪৯৬ সালে পোপ সেন্ট জেলাসিউও ১ম জুলিয়াস ভ্যালেন্টাইন স্মরণে ১৪ই ফেব্রুয়ারিকে ভ্যালেন্টাইন’ দিবস ঘোষণা করেন।
বাংলাদেশে ভ্যালেন্টাইন ডে :উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে,বাংলাদেশে সর্বপ্রথম শফিক রহমান, যায়যায়দিন পত্রিকার সাংবাদিক এবং সম্পাদক, ১৯৯৩ সালে ভালোবাসা দিবস পালন করেন। তিনি লন্ডনে পড়ালেখা করার সময় পশ্চিমা সংস্কৃতির সংস্পর্শে আসেন। যায়যায়দিন পত্রিকার মাধ্যমে তিনি দেশবাসীর নিকট ভালোবাসা দিবসের কথা তুলে ধরেন। বাংলাদেশে তাকে ভালোবাসা দিবসের জনক বলা হয়।
উল্লেখ্য যে,এ ভ্যালেন্টাইন ডে ১৭৭৬ সালে ফ্রান্সে নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হয়। ইংল্যান্ডে প্রশাসনিক ভাবে এ দিবসটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়৷পাকিস্তানে জনসম্মুখে এ ভ্যালেন্টাইন ডে নিষিদ্ধ করা হয়। ২০০৯ সাল থেকে ইরানে ভ্যালেন্টাইন ডে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এছাড়া ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি ও জার্মানিতে বিভিন্ন সময়ে এ দিবস প্রত্যাখ্যাত হয়।
(তথ্যসূত্র:উইকিপিডিয়া)
জগতের পবিত্র ভালোবাসা যদি অপবিত্র পাদ্রীর নামে নামকরণ করা হয়৷ তাহলে এ জগতের সকল ভালোবাসা কি মিথ্যে?আর কোন রুচিতে ভালোবাসা দিবস বলা যায়। যে পাদ্রীর অবৈধ সম্পর্কের দায়ে ফাঁসি হলো। তার নামে ভালোবাসা দিবস পালন করা হয়৷। তাহলে কি সকল অবৈধ সম্পর্ক ;ভালোবাসা?হে ভালোবাসা বলে চিৎকার করা মানুষ বলো: তোমরা এ দিনে ভালোবাসা দিবস পালন করে ভালোবাসাকে অবমাননা করতে চাও?
যে ফেব্রুয়ারী ভাষার জন্য রক্তে রঞ্জিত! সে ফেব্রয়ারী আজ ভিন দেশী সভ্যতায় জন্ম নেওয়া নানান দিবসে জর্জরিত। যে দিবসের নামগুলো পর্যন্ত বাংলা ভাষার না। যে দিবসের নাই কোনো নির্দিষ্ট ইতিহাস;নাই কোনো তাৎপর্য। ভাষার মাসে ভিন্ন ভাষার বুলিতে ভরা দিবস যদি ফেব্রুয়ারিতে পালন করা হয়৷ তাহলে সালাম,বরকত,রফিক, সকলের রক্তের অবমানননা করা হলো। অবমাননা করা হলো বাংলা ভাষার।
এ তো মিথ্যাচারে কার না বলতে মন চাইবে:ফেব্রুয়ারী তুমি মিথ্যা! আমি চিৎকার করে বলতে চাই:ফেব্রুয়ারী মিথ্যা। সত্য হচ্ছে আমার ভাষার মাস ফাল্গুন।আবারো চিৎকার করে বলি:ফেব্রুয়ারী তুমি মিথ্যা। ফেব্রুয়ারী নামটি যে বাংলার নয়! তাই তুমি মিথ্যা, মিথ্যা।

Related Articles

Back to top button