গল্প

শীতে অনন্ত জুবায়েরের মানবতা – গোলাপ মাহমুদ সৌরভ 

অবুঝ ছোট্ট ছেলেটার নাম অনন্ত জুবায়ের। সবেমাত্র ক্লাস থ্রিতে পড়ে। সহজ সরল স্বভাবের ছেলে মনে কোন পেজ গুঁজ নাই। বাবা-মা’র আদরের বড় ছেলে। অনন্ত জুবায়ের বয়সে খুবই ছোট কিন্তু বিবেক বুদ্ধি ও মানবতা এবং মনুষ্যত্ব বোধ তার মাঝে লক্ষ্য করা যায়।অনন্ত জুবায়ের প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার সময় মা বিভিন্ন ধরনের নাস্তা বানিয়ে দেয় এবং বাবা বিশ টাকা করে টিফিনের খরচ দেয়। অনন্ত জুবায়ের মানবিক এবং দানশীল ভালো মনের মানুষ। রোজ ক্লাসে মায়ের হাতের বানানো নুডলস এবং পোয়ারটা গরীব অসহায় বন্ধুদের কে সাথে নিয়ে ভাগ করে খায়। ক্লাসের সকল শিক্ষক এবং সহপাঠী বন্ধুরা অনন্ত জুবায়ের কে প্রচন্ড ভালোবাসে। মাঝে মাঝে যদি দেখে ক্লাসে কোন সহপাঠীর কলম খাতা কিংবা পেন্সিল না থাকে তখন নিজের গুলো দিয়ে সহযোগিতা করে। একদিন অনন্ত জুবায়ের মা জিজ্ঞেস করলেন আচ্ছা, তোমার এতো খাতা কলম পেন্সিল লাগে কেন তুমি কী এমন লিখো যার জন্য এতো লাগে? অনন্ত জুবায়ের কিছুক্ষণ চুপ করে বললো, আম্মু আমিতো কোন অপচয় করিনা সঠিক কাজে ব্যবহার করি। মাঝে মাঝে অনন্ত জুবায়ের মা’কে যুক্তি দেখায় জানো মা,ভালো ছাত্রদের একটু বেশি লেখতে হয় তাই সবকিছুই একটু বেশি লাগে। তা ঠিক আছে, আমি জানি তুমি একটু লেখালেখি বেশি করো কিন্তু মাঝে মাঝে তোমাকে খাতা কলম পেন্সিল কিনে দিলে কিছুদিন পরেই আর দেখি না কোথায় যায়। অনন্ত জুবায়ের মুচকি হেসে বললো আম্মু তুমি জানো, সেদিন তুমি যখন ক্যান্টিনে আমাকে খাওয়াচ্ছিলে তখন আমার একটা বন্ধুর কথা বলতেই তুমি তাকেও খাইয়ে দিয়েছিলে সেই বন্ধু টা খুবই গরীব টাকার অভাবে অনেক সময় খাতা কলম পেন্সিল কিনতে পারে না টিফিনের সময় টিফিনও খায়না তাঁকে দেখে আমার খুবই মায়া হয় তাই মাঝে মাঝে তাকে একটু খাবার দেই কখনো খাতার কয়েক পৃষ্ঠা থাকতে তাঁকে দিয়ে দেই তুমি কিছু মনে করোনা আম্মু। সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে মায়ের বুকটা গর্বে ভরে যায় এতো ছোট একটা ছেলে এমন মানবিক এবং ভালো মন-মানসিকতার অধিকারী, সত্যিই সন্তানেরা ভালো কিছু করলে বাবা-মার কাছে খুবই আনন্দদায়ক হয়। কথার ফাঁকে অনন্ত জুবায়ের বললো, আম্মু একটা কথা বলবো তুমি আবার রাগ করবেনাতো?  কী কথা বলো। আম্মু তুমি দেখছো না আজ কয়েকদিন ধরে আমি একটা সোয়েটার স্কুলে যাই কিন্তু আমার আরেকটা সোয়েটার কোথায় তুমি জিজ্ঞেস করেছিলে আমি বলেছিলাম ওটা স্কুলে হারিয়ে ফেলেছি কিন্তু না ওটা আমি আমার বন্ধু আবির কে দিয়ে দিছি সে শীতে কাঁপছিলো তার নাকি সোয়েটার কিনার টাকা নাই আমার তো দুটো সোয়েটার তাই তাকে একটা দিয়ে দিলাম। জানো মা, আবির প্রতিদিন এই শীতে সোয়েটার গায়ে দিয়ে স্কুলে আসে আগে তার প্রচুর কষ্ট বারি ঠান্ডা শীতে। একদিন ক্লাসের স্যার আবিরের গায়ে আমার সোয়েটার দেখে অবাক চোখে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ পর আমাকে আর আমার বন্ধু আবির কে সামনে ডাকলো আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম। তারপর স্যার প্রথমে আবির কে বললো, আবির তোমাকে সোয়েটার কে কিনে দিছে আবির বললো, স্যার আমি কিনি নাই অনন্ত জুবায়ের আমাকে উপহার দিয়েছে। স্যার মাশাআল্লাহ বলে হাসি দিয়ে বললো এই শীতে অনন্ত জুবায়েরের মানবতা দেখে আমার খুবই ভালো লাগলো,আচ্ছা, অনন্ত জুবায়ের তুমি এমন সুন্দর মানষিকতা কার কাছে শিখেছো আজ আমি এবং আমরা লজ্জিত তোমার মতো একজন শিশুর মনে মানবতা ও মনুষ্যত্ব বোধ কাজ করে কিন্তু বড়দের মনে তা করা উচিত। আজ থেকে তুমি মানবিক অনন্ত জুবায়ের নামে আমাদের বিদ্যালয়ে পরিচিতি পাবে তোমার মতো একজন মেধাবী শিক্ষার্থী আমাদের স্কুলের জন্য যেমন গর্বের তেমনই গৌরবের। তোমার জন্য দোআ ও শুভকামনা রইল অনন্ত জুবায়ের তুমি একদিন অনেক বড় হবে এবং মানব সেবায় নিজেকে অনেক দূর এগিয়ে যাবে সেই কামনা করি। ছেলের মুখে  সুন্দর কথা শুনে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,আমিও দোয়া করি বাবা তুমি একদিন মানুষের মতো মানুষ হয়ে বাবা-মা’র মুখ উজ্জ্বল করবে এবং অসহায় গরীব মানুষদের সেবা করে সমাজে মনুষ্যত্বের পরিচয় দিবে এবং পয়সাওয়ালা লোকদের বুঝিয়ে দিবে  মনুষ্যত্ব হীন লোকের অর্থ সম্পদ মূল্যহীন যদি মানবতার ফেরিওয়ালা না হওয়া যায়।

Related Articles

Back to top button