শৈশবের একটি ঘটনা – আব্দুল হাকীম
শৈশবের একটি ঘটনা। যা আজো আবছা আবছা মনে পড়ে। একদিন বাড়ীর পিছনে বিশাল চকটিতে হাটতে বের হলাম। পড়ন্ত বিকেলের ক্লান্ত সূর্যটা যখন তার বাড়ীতে ফেরার জন্য পশ্চিম-কাশের মাটি ছুঁই ছুঁই ঠিক তখনই।
সঙ্গ ছিলোনা কেউ, তাই দুরু দুরু বুকে হাঁটতে ছিলাম ক্ষেতের আইল পথ ধরে ।আর বুকটা একটু দুরু দুরু না করবেইবা কি করে ,তখন কেবল শীতের আগমন ঘটতেছিলো।তাই সন্ধা নামার আগেই চারিদিকে শুরু হয়ে যেত শিয়ালের হাক ডাক।
যার কারণে একটু আওয়াজ পেতে থমকে দ্বাড়াতে লাগলাম ক্ষেতের আইল পথে।কিন্তু কোনো উদ্দেশ্য ছিলোনা ।এবং ছিলোনা কোনো গন্তব্যও।প্রকৃতির সুন্দর্যই যেনো সামনের দিকে টেনে যাচ্ছিলো আমার অজান্তে।
আর এভাবে চলতে চলতে হঠাৎ নযড়ে পড়লো একটি পাখি।গাছের ডাল থেকে উড়ে এসে পাখিটি তার ডানা মেলে ঝুপ করে বসে পড়লো ক্ষেতের মধ্যে।এরপর তার পাখা দুটো ঝাপটাতে শুরু করলো, আর উড়তে চেষ্টা করতে লাগলো।
হয়ত কোনো গাছের ডালে ,দুরন্ত ছেলের ঢিল খেয়ে,উড়াল দেয়ার শক্তিটুকু হারিয়ে ফেলেছে সে।
তার এই করুণ অবস্হা দেখে হৃদয়ে আমার মায়া হলো। তাই ধীরে ধীরে পাখিটির কাছে গেলাম, কিন্তু সে যে আমায় দেখে ভয় পেয়ে গেলো ।হয়ত পাখিটি ভেবেছে আমি তাকে কষ্ট দেবো ।কিন্তু আমিতো চেয়েছিলাম তাকে আদর করে সুস্হ করে তুলব।তাই সে ভুল বুঝে কমজোর পাখা দুটো ঝাপটাতে ঝাপটাতে সামনের দিকে একটু উড়ে গেলো । তখন আমিও তার পিছে দৌড়ে গেলাম ,সে আবার সামনের দিকে কিছুটা উড়ে গেলো।
এভাবে সে আমাকে একপর্যায়ে ক্লান্ত করে ছাড়লো ।কিন্তু সেও এতক্ষণে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে । তাই এবার আমি কাছে গিয়ে তাকে আস্তে করে হাতে তুলে নিলাম।কিন্তু কি আশ্চার্য! পাখিটি যে একবারই শান্ত হয়ে গেলো।সে বুঝি আমার হাতের পরশে হৃদয়ের মমতাটুকু বুঝতে পেরেছে।
যাক! বড় ইচ্ছে ছিলো পাখিটিকে আদর করে সুস্হ করে তুলবো । এবং লালন করে একদিন অনেক বড় করবো ।কিন্তু পৃথিবীর নিয়ম অনুজায়ী সেও যে একদিন ক্ষণিকের পৃথিবী ছেড়ে পরোপাড়ে তার পারি জমায়।