আজকে তোমাকে দেখার জন্য মনে হয় সূর্যটিও এগিয়ে এসেছে পৃথিবীর কাছে। মনেহয় চাঁদটিও আজ আগে জাগবে। তোমার নামটাও যেমন ইউজার্সিফ তোমায় দেখতেও সেরকম।
এই দেখো তুমি প্রতিদিন আমার সাথে এরকম বলো। কেন? তাহলে ছেলে হয়ে যে সাজুগুজু করো, কেউ করে নাকি? আচ্ছা আমি কিভাবে সেজেছি? একটু কটুতৈল দিয়েছি মাথায়। ঠান্ডার জন্য একটা টাই পড়েছি। আর স্কুলের নিয়ম অনুযায়ী সূ পড়েছি এইতো। আর তুমি! তোমরা মেয়ারা পায়ে নুপুর। কানে দূল। মেকাপ, নকপালিশ, লিপস্টিক, আরো যে কত যায়গায় কতকিছু লাগিয়েছো। তোমাদের চেহারায় মাসে যতটুকু আটা ময়দা মাখাও সেই পরিমাণ আটার রুটি দিয়ে আলাদীন এর প্রদীপের জিনের এক বেলা খাবার হয়ে যেতো তাও আবার পেটপুরে । কি বল্লে তুমি আমায় আলাদীনের ঐ মাথামোটা জিনের সাথে তুলনা করেছো! না না আমি সেরকম কিছু বলতে চাইনি তুমি রাক করোনা তুমি আলাদীনের জিন হবে কেন তুমি তো আমার,,, এতটুকু অরুনিকে বলার পড়েই থতমত খেতে শুরু করলো ইউজার্সিফ।
তরকারি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে।
কথা গুরিয়ে আচ্ছা অরুনি তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করবো কিন্তু মনে থাকে না। তোমাদের স্কুলের এরকম নাম কেন তরকারি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়? আমি জানি স্কুলের হেড স্যার একদিন এই স্কুলের আদি কাহিনি শুনিয়েছিল। অনেক আগে মানে হেড স্যারের দাদা কাঞ্চন রাড়ি। এই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিল । স্কুলের এ-ই মাঠ তখন আরো নিচু ছিল। এলাকায় কাঞ্চন রাড়ি ই একটু পড়াশোনা জানতো। কোনো মতে কিছু অল্প সংখ্যার যোগ, বিয়োগ আর ভাগ, গুন ইংরেজি কিছু শব্দের অর্থ যেমন what অর্থ কি এমন কিছু শব্দ। আর বাংলা কিছু গদ্য, কবিতা তাও আবার কবি মহেশ কুমারের।
কাঞ্চন ড়ারি স্কুল খুলেছে ছাত্রও এসেছে কিন্তু পয়শা পাবে কোথায় কেই বা দিবে? কিন্তু তার ইচ্ছে ছিল গ্রামের সকলকে বিদ্যা বুঝাবে। আবার তার সংসারও চালাতে হবে। তাই সে এই মাঠেই চাষাবাদ শুরু করলো। যেমন গরমে কদু, কুমরা আর বর্ষায় পেঁপে শষা। ঝাঁকা দিতো উঁচু করে তার নিচেই ক্লাস হতো পাশে পেঁপে ঘাছের খুটি। এতে স্কুলও চলতে শুরু করলো আর তরকারি বেচে সংসারও। কিন্তু যাইহোক না কেন কাঞ্চন ড়ারির স্কুলের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। সুনাম শুনে একদিন এক টিউন আসলো পরিদর্শন করতে। স্কুলের কাছে এসেই এক কুঁজো লোককে জিজ্ঞেস করলো দাদো এখানে স্কুল কোন দিকে? কুজো লোক বললো বাফু চার কদম এগিয়ে বামে তাকান দেখতে পাবেন স্কুল । ঠিক সেরকমই হলো চার কদম এগিয়ে বামে তাকাতেই চোখ পড়লো কদুর ঝাঁকার নিচে, দেখা যাচ্ছে সারে পাঁচ হালি ছাত্র সংখ্যা হবে। মাস্টার কাঞ্চন ড়ারি একটা কুমরোর ওপরে বসে কদুর সাথে হেলান দিয়ে পাড়াচ্ছে।
পরিদর্শন করা শেষে জিজ্ঞেস করলো কাঞ্চন ড়ারি আপনার স্কুলের নাম রেখেছেন কি? উত্তরে বললো বাপু নাম ঠাম তো আর রাখিনি শুধু পড়িয়েই যাচ্ছি। টিউন সাহেব একটু ভেবে বললো আজ থেকে নাম হবে তরকারি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
কাঞ্চন ড়ারির স্কুলের নতুন নাম শুনে নিকটস্থ গণমাধ্যম কর্মীরা এসে ভিড় জমাতে শুরু করলো নিউজ করার জন্য। বিস্তারিত জেনে পাঠিয়ে দিল। পরের দিন সকাল বেলা হাতে লেখিত কাঞ্চন ড়ারির তরকারি স্কুল হেডলাইনে আর কুমরো, কলা, কদু কাঁচমরিচের ছবি দিয়ে পেপারে প্রকাশ হলো। আস্তে আস্তে ঝাকার নিচে স্কুল টি আজ বিরাট দালানে পরিনত হয়েছে ।
তুমি এমন কেনো অরুনি?
কেমন কি করেছি?
ক্লাস চলাকালীন সময় শুধু আমার দিকে তাকিয়ে থাকো। স্যার দেখলে কি বলবে বলো। অরুণী মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বললো জানিনা মনে হয় তুমি আমার অক্সিজেন তোমায় না দেখলে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে তাই তাকাই। তোমার মাতাল চাহনিতে আমি কিন্তু লজ্জা পাই। প্লিজ ক্লাসে এভাবে তাকিওনা দরকার হলে ছুটির পরে বাসায় এসে ঘন্টাখানিক তাকিয়ে কাজা আদায় করে নিও। তবুও ক্লাসে তাকিও না। সবাই যদি আমাদের কথা যেনে যায় তাহলে তো আমার বিপদ হবে। তোমার বাবা আমাকে যতটুকু আশ্রয় দিয়েছে আমি তাও হারাবো। কাথাটা শেষ না হতেই অরুণি ইউজার্সিফের মুখ চেপে ধরে বললো এরকম কথা আর কবুও মুখে আনবে না। আমার কাছ থেকে কেউ তোমাকে আলাদা করতে পারবে না। কেউ যদি নিতে আসে না তোমাকে আমি আমার কলিজার নিচে লুকাবো। আবারো দুজনে হাটা শুরু করলো অপরের হাত ধরে।
মেহরাব,,,,,,,
মেহরাব ওকে বলা যায় একটা পাগল। পাগল ছাড়া কি আর বলতে পারি! বন্ধু! তাই বলে এমন হবে? প্রতিদিন আমার জন্য কিছু না কিছু নিয়ে আসে। ঐতো কাল এনেছিল সেমাই রান্না। তার আগের দিন এনেছিল কুলি পিঠা। ওর মা বাড়িতে যা রান্না সবই আমার জন্য নিয়ে আসে। জানিনা কবে থেকে ভাত তরকারি আনা শুরু করে। আমি বললে তা কি শোনে, আমাকে ছাড়া কিছু খেলে নাকি ওর পেটে হজম হয়না তাই। আজকে আবার কি এনেছে আল্লাই ভালো জানে।
হটাৎ করে পিছন থেকে চোখ চেপে ধরলো। আমি বললাম কে রে কে? কিছুই বললো না। একটু ভেবে বললাম নিশ্চয়ই মেহরাব হবে তা ছাড়া আর কে। আমিতো আর কারো সাথে কথা বলিনা। চোখ টা ছেড়ে বলে উঠলো তুমি প্রতিদিন এত দেড়ি করো কেন? তাড়াতাড়ি আসতে পারো না? দেখোনা আমি ভালো ছাত্র না হলে কি হবে সবার আগে এবং সামনে বসি। তুমিতো ক্লাসের সবচেয়ে ফাস্ট বয় তোমার তো আরো আগে আশা উচিত। ছাত্র জিবনে বিদ্যালশের এটাইতো মজার ব্যাপার। আগে আশা আগে বসা। আচ্ছা অনেক কথা হয়েছে এবার ব্যাগ রেখে এটা খেয়ে নাও। বলেই একটা পলিথিনে কালো কালো কি যেন বের করে দিল। আমি বললাম আজকে আবার কি এনেছো? আজকে তোমার জন্য তেঁতুল ভর্তা এনেছি। ইস তেঁতুল ভর্তা ছেলেরা খায়! কেউ দেখে ফেল্লে কাল মুখ দেখাতে পারবো না। সব মেয়েরা হাসবে আমি ফিসফিসিয়ে বললাম।
আরে খেয়ে দেখো কি মজা। অনেক ঝগড়া করে এনেছি তোমার জন্য পৃতি আফুর সাথে। জানো গ্রামের মেয়েরা মাজে মধ্যে এরকম টক ভর্তা খায় কয়েকজন মিলে। অনেক আনন্দ হয়। আচ্ছা তোমার গ্রামে খায়না? ওর মুখে গ্রামের কথা টি শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেলো। ও আমার দিকে তাকিয়ে আবার বললো আচ্ছা আমাকে তো কখনোই বললে না তোমার বাড়ি কোথায়? বলো না তোমার বাড়ি কোথায়?
অজানা বাড়ি,,,,,,,,,,,, ,,
আমার বাড়ি অচীনপুরে। সে-সব আমার কিছুই মনে নেই ।শুধু মনে আছে কোনো এক বদ্ধ ঘরে থেকে এক লোককে ফাঁকি দিয়ে পালিয়েছি। অনেকক্ষণ অনেক জোরে দৌড়ালাম। হাপিয়ে গেলাম। তারপর সেখান থেকেই আমার জিবন শুরু। কয়েক দিন পথেই রইলাম। তার পড়ে আর পারছি না বলে একটা হোটেলে চাকরি নেই। সেখানে কাজ করি। কেটে গেলো কয়েক মাস এভাবেই। তারপর একদিন হোটেলে একটা টেবিলের জন্য খাবার নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলাম তখনই আমি শুনতে পেলাম পিছন থেকে কে যেন আমায় মমতা মাখা কন্ঠে ডাকলো বাবা। পিছনে ফেরার আগেই আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আবার কি মনে করে ছেড়েও দিল। তাকিয়ে আছি দুজনের চোখে চোখ রেখে। লোক টি আমায় একটু পড়ে বললো ছড়ি ক্ষমা করো ভুল দেখেছি ।
তোমার বাড়ি কোথায় সান্ত গলায় জিজ্ঞেস করলো লোকটি।
কিন্তু আমি কোনো উত্তর দিতে পারিনি।
আবার জিজ্ঞেস করলো তোমার মা বাবা কোথায়?
এবার ও কিছু বলতে পারিনি।
একটু সময় নিরব থেকে বললো। আমার একটা ছেলে ছিল তোমার মতো পিছন থেকে দেখে মনে করেছিলাম আমার সেই ছেলেটা। কিন্তু ও অনেক আগে মারা গিয়েছে। কিন্তু ওর উপস্থিতি এখনো আমি অনুভব করি।……………পরবর্তী পর্ব আসবে।
পর্ব সমাপ্ত।