খোলা মতামত

গচ্ছিত ভালোবাসা–তানজিবা তামশি’

আমি একজন কে অনেক ভালোবাসি।  আমাদের পরিচয় ২০১৮ থেকে। আমি তখন এডমিশন প্রিপারেশন নিচ্ছিলাম দিনাজপুর এর একটি কোচিং সেন্টার এ। সে হাজীদানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ে ফিসারিস ডিপার্টমেন্টয়ে থার্ড ইয়ার। সত্য বলতে আমাদের পরিচয় টা অন্য আট দশ টা প্রেমের মতোই।  প্রতিটা বিকেল দুজনে একসাথে কাটিয়ছি। প্রতিদিন দেখা করা চাইই চাই।  আমরা দুজনি প্রচুর ঘুরতে পছন্দ করি। আমরা দুজনি খোলা আকাশের নিচে বসে থাকতে পছন্দ করি। নদীর ধারে বসে থাকতে পছন্দ করি। স্বপ্নের সময় ছিল সেই সময় গুলো। সে আমাকে প্রচুর সম্মান করে। আমার প্রতিটা ইচ্ছা কে সম্মান করে। দুজনি আনকরা স্বপ্ন দেখতে পছন্দ করি।
কিন্তু সব ভালো থাকা সবসময় থাকে না। আমি এখন বিবিএ অনার্স এ পড়ি ঢাকায় । আর তার মাএ ২ মাস আছে অনার্স কমপ্লিট হতে। দুজন  দুপ্রান্তে  সে দিনাজপুরে আমি ঢাকায়।   যে বিকেল গুলো দুজনে এক সাথে কাটিয়েছি,  যে খারাপ না লাগা সময় গুলোতে হুট করে দেখা করছি,  সে গুলো এখন আর হয় না। তবে এই ডিসিশন টা আমাদের ফিউচার একসাথে থাকতে যেন পাড়ি তার জন্যই নেওয়া। কারন বাসায় থাকলে প্রতিনিয়ত বিয়ের কথা হতো ছেলে দেখাতো।  ঢাকায় থাকলে হয়তো এসব আলোচনা থেকে একটু হলেও দূরে থাকবো তাই
এর মধ্যেই প্রতিনিয়ত আমার বাসায় আমার বিয়ের কথা উঠতে বসতে চায়ের কাপে সবসমই হতো।  মাঝে মাঝে ছেলে দেখতে আসতো। ছেলের বোন দেখতে আসতো।  বা কখনো কখনো পুরো ফ্যামেলি সহ চলে আসতো দেখতে। কিন্তু দিন শেষে সবাই বলে শ্যামলা মেয়ে চলবে না। কেউ কেউ আবার মুখ দেখার পর আর অপেক্ষই করত না চা পান করার। মাঝে মাঝে আয়নার সামনে বসি আর ভাবি ফর্সা হলে কি সবার পছন্দ হতো। আবার মাঝে মাঝে ভাবি আল্লাহ হয়তো তার কপালেই আমাকে রেখেছে তাই হয়তো কারো পছন্দ হয় না। যে কোনো উপায়ে ভেঙে যাচ্ছে। মা বাবা বিয়ে দেওয়ার জন্য পা বাড়িয়ে আছে।
সমাজের এখনো প্রায় লোকের কাছে সুন্দর মানেই ত্বকের রঙ ফর্সা হতে হবে। আবার কিছু লোক বলবে কালো মেয়েরা মায়াবতী। আমি জানিনা এরা কেনো এসব লিখে!
গায়ের রঙ কালো এটা নিয়ে যেমন সমস্যা আমাদের সমাজের মানুষের তারচেয়ে আমাদের পরিবারেরও কম সমস্যা না।
আমার কথাই বলি। আমার মায়ের মেয়ে আমি কালো এদিকে তার খেয়াল নাই সে ঠিকই আমার জন্য সুন্দর ফর্সা, লম্বা ছেলে খুঁজছে । আমি যাকে এতোটা ভালোবাসি তাকে তার পছন্দ না।  কারন সে আমার মতোই শ্যামলা, সুন্দর না,  হয়তো হ্যান্ডসাম না।  তার মন টা দেখার সময় আমার মা’র  নেই ।
আমাকে কে যে সে এতো টা ভালোবাসে সম্মান করে,  আমার এক টুকরো হাসি দেখলে যার পুরো পৃথিবী টা হাসে,  যে সারাটাক্ষণ আমায় মাথায় করে রাখে এদিক তার নজর নেই। এটা শুধু আমার মায়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য তা না। প্রায় সব পরিবারেই  বিয়ে করানোর কথায় আসলে ফর্সা মেয়ের প্রতিই প্রাধান্য বেশি দেয়। অনেক পরিবার আবার নিজের কালো মেয়েকেও ঠিকঠাক ভাবে মানতে পারেনা যার জন্য বাজার থেকে ফর্সা হবার ক্রীম মেয়ের মুখে ঘষায়। আর আমার কথা তো না বলাই ভালো, আমার দাদী দের চিন্তা ধারা আমার আদৌ বিয়ে হবে কিনা। আমার জন্য সরকারী চাকুরীজীবী ছেলে খুঁজছে সে ব্যাংক এর ক্যাশিয়ার হলেও চলবে।  বা টাকা ওয়ালা আমার থেকে দুগুন বয়সি ব্যবসায়ী হলেও চলবে। তবে খারাপ লাগে এটাই ভেবে যে আমি যাকে ভালোবাসি সে তার ডিপার্টমেন্ট এ অনেক ভালো পজিশন এ আছে। শুধু ডিপার্টমেন্ট না সে অনেক ভালো পড়াশুনায়।  সে অলরেডি তার টিচার এর কাছে রেফারেন্স ও পেয়েছে জাপানে পিএইচডি করার। শুধু তার সময় এর দরকার।  আমি যদি তার পাশে না থাকি বা আমার অন্য কথাও বিয়ে হয়ে যায় সে স্থির হয়ে যাবে। শুধু তার জীবন না আমি কী ভালো থাকতে পারব। কখনো মানতে পারব তার জায়গায় অন্য কাউকে বসাতে। হয়তো  অন্য কারও সাথে বিয়ে হলে বিয়ের পর দিন থেকে সংসার এর কাজে নিজেকে ব্যাস্ত করে ফেলতে হবে। শশুর বাড়ির সবার মন যোগায় চলতে চলতে ছোট ছোট স্বপ্ন গুলো আবেগ গুলো ব্যাস্ততায় চাপা পড়ে যাবে। আর যাকে এতো খানি চিনতাম যাকে নিয়ে ভাবতাম তার সকালের ঘুম এভাবে ভাঙাবো। তার এটা পছন্দ এভাবে সাজবো। ভালো না লাগা বিকেল গুলোতে  ফুচকা খেতে যাব, দুজনে একসাথে রান্না করব। জ্যস্নারাতে ছাদে দুজনে গল্প করব। বৃষ্টির দিন বাইকে ঘুরব। সে একসময় মাদ্রাসায় পড়েছিল। আর আমি কুরআন তিলিওয়াত করতে পরি না। তার অনেক ইচ্ছা আমাকে সে নিজে কুরআন শিক্ষা দিবে। আমরা দুজনে হজ্বে যাব। দুজনে তাহাজ্জুদ পড়ব। বিয়ের পর আমার বাবার সে ছেলে হবে।  বাইকের পিছনে আমার বাবা কে নিয়ে ঘুরবে। একই পান্জাবী পড়বে।  এই স্বপ্ন গুলোর কী হবে?
এই স্বপ্ন গুলো কী নতুন কারও সাথে সাজাতে আদৌ পারব  ? আর স্বপ্ন সাজানো তো দূরের কথা এমন মন মানসিকতার মানুষ সে হবে কী না তারি বা কী গ্যারান্টি আছে। এভাবে প্রতিনিয়ত হয়ত শশুর বাড়ীর দায়িত্ব আমাকে ছেপে যাবে। এক সময় বাচ্চা হবে।  তাদের নিয়ে, তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে নিজেকে বিলিয়ে দিব।
কিন্তু অবসর সময় এই ছোট ছোট স্বপ্ন গুলো  মনে পড়ে ভিষণ কাঁদাবে।
আজ যদি ফ্যামেলি পাশে থাকতো। দুজন কে সময় দিতো সাপোর্ট দিতো। হয়তো জীবনটা অনেক সুন্দর হতো। হয়তো দুজনি নিশ্চিন্তে আরও অনেক ভালো ভাবে পড়াশুনা টা করতে পারতাম অনেক ভালো একটা পজিশন এ পৌছে যেতাম। আর আমার বিশ্বাস সে অনেক ভালো কিছু করবে তার মধ্যে সে টেনডেন্সি টা আমি দেখেছি। শুধু সাপোর্ট এর দরকার।
এসব কিছু বাদ দিলাম, সৌন্দর্য্য কী সব কিছুই পারে?
সত্যকারের ভালোবাসা এনে দিতে পারে?
আমি বিশ্বাস করি আমি আমার মতোই কাউকে পেয়েছি। আল্লাহ হয়তো ভালো বুঝেই তাকে আমার জীবনে পাঠিয়েছে। আমার জীবনের অতীত খুব একটা ভালো ছিল না।আমার অতীত সম্পূর্ণ সে জানে।  আমার সেই অন্ধকার জীবন থেকে ফিরিয়ে আনার পিছনে সম্পূর্ণ কৃতিত্ব তার। এতো কিছুর পড়েও কি করে আমার ফ্যাম্যালির লোক পারে তাকে অপছন্দ করতে এটা আমার বুঝতে কষ্ট হয়।
শুধু ধন সম্পদ সব আনন্দ এনে দিতে পাড়ে?
তবে কেউ কেউ বলবে বাস্তবতা অনেক কঠিন, বাস্তবে আসলে ঠিকি এসব আবেগ চলে যাবে।
কিন্তু কিছু কিছু অনুভুতি আজীবন রয়ে যায়। কিছু কিছু  আবেগ অভ্যাস হয়ে যায়।
 জানি না এর পড়ে আমাদের ফিউচার কি অপেক্ষা করছে । তবে আল্লাহর উপর পূরর্ন বিস্বাস আছে যে আল্লাহ সেটাই করবে আমাদের সাথে যেটা আমাদের জন্য মঙ্গল।
আমাদের কথা না হয় এখানেই থাক।
 সব দিকে তাকালে এটাই দেখি, গায়ের রং, সৌন্দর্য্য, ধন সম্পদ, বিচারবিবেচনা করে বিয়ের সমন্ধ করা হয়। এসব কিছু কাউকে বিচার করতে পারে না।
মন মনসিকতা, ব্যবহার এসব দিয়ে কাউকে বিবেচনা করা উচিৎ।
শেষে শুধু বলবো আপনি আমি মানুষ এর থেকে বড় পরিচয় কিছু হতে পারে না।মানুষ হিসেবে বাঁচতে শিখুন আর অন্যকেও মানুষ হিসেবেই বিবেচনা করুন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button