প্রভুর বাণী

নামায পরিত্যাগকারীর ভয়াবহ শাস্তির কিছু পরিণতির বর্ননা

গুরুত্ব বোঝানোর জন্য প্রথমে ঐতিহাসিকদের মত পেশ করছি । ইবরাহীম নাময়ী, আইয়ুব সাখতিয়ানী, আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারক, আহমদ ইবনে হাষণ ও ইসহাক বিন রাহওয়া (র) মতে অপ্রয়োজনে অথবা নামায় পরিত্যাগকারীকে নামাযের ওয়াক্ত শেষ হবার পর কাফেরগণ্য করতে হবে।

নবী করীম (সা) বলেছেনঃ (الفرق بين الرجل وبين الكفر ترك الصلوة .)

মুমিন ও কাফেরের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে নামায ছেড়ে দেয়া।” (মুসলিম) এক হাদীসে বর্ণিত রয়েছে, যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামায যথারীতি আদায় করবে, আল্লাহ্ তাকে পাঁচটি মর্যাদা প্রদান করবেন।

 

১. তার দারিদ্রতা দূর করবেন, ২. তাকে কবরের আযাব থেকে মুক্তি দেবেন, ৩. তার আমলনামা ডান হাতে দেবেন, ৪. বিদ্যুতবেগে তাকে পুলসিরাত পার করাবেন, ৫. তাকে বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আর যে নামাযের ক্ষেত্রে উদাসীনতা দেখাবে আল্লাহ্ তাকে ১৪টি শাস্তি প্রদান করবেন। এর মধ্যে পাঁচটি পৃথিবীর জীবনে, ৩টি মৃত্যুর সময়, তিনটি কবরে, এবং তিনটি কবর থেকে পুনরুজ্জীবিত হবার সময়। পৃথিবীর পাঁচটি হচ্ছে, তার জীবন থেকে বরকত ওঠে যাবে, তার মুখমণ্ডল থেকে সংলোকসুলভ ঔজ্জ্বলতা দূর হয়ে যাবে। তার কোন নেক আমলের প্রতিদান দেয়া হবে না।

 

তার কোন দোয়া কবুল হবে না এবং নেককারদের দোয়া থেকে সে বঞ্চিত হবে। আর মৃত্যুর সময়ের তিনটি শাস্তি হচ্ছে, সে অপমানিত হয়ে মারা যাবে, ক্ষুধার্ত অবস্থায় মারা যাবে, এত পিপাসিত অবস্থায় মারা যাবে, সারা পৃথিবীর সাগরের পানি পান করলেও তারপিপাসা মিটবে না। কবরে থাকাকালে যে তিনটি শান্তি সে ভোগ করবে, তা হচ্ছে তার কবর সংকুচিত হয়ে তাকে এত জোরে চাপ দেবে যে, এক পাশের পাজরের হাড় ভেংগে অপর পাশে চলে যাবে, তার কবর এমনভাবে আগুন দিয়ে ভরে দেয়া হবে, রাতদিন তা জ্বলতে থাকবে এবং তাকে কিয়ামত পর্যন্ত একটি বিষধর সাপ দংশন করতে থাকবে। তার হিসেব কঠিন হবে, সে আল্লাহকে ক্রুদ্ধ দেখতে পারে এবং সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।

 

অন্য বর্ণনায় রয়েছে, কিয়ামতের দিন তার কপালে তিনটি কথা অংকিত থাকবে। একটি কথা হবে ঃ “হে আল্লাহর হক বিনষ্টকারী”, দ্বিতীয় কথাটি হবে : “হে আল্লাহর গযবের উপযুক্ত ব্যক্তি।” ততীয় কথাটি হবে “তুমি পৃথিবীতে যেমন আল্লাহর অধিকার প্রদান করনি, আজ তেমনি আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হবে।” হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত, কিয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে আল্লাহর সামনে দাঁড় করিয়ে জাহান্নামে যাবার আদেশ দেয়া হবে। সে জিজ্ঞেস করবে ঃ হে আমার প্রতিপালক! কি কারণে? তখন আল্লাহ বলবেন ও নামায নির্ধারিত সময়ের পরে পড়া ও আমার নামে মিথ্যা কসম করার কারণে। একবার রাসূল (স) বলেনঃ “হে আল্লাহ্! আমাদের মধ্যে কাউকে বঞ্চিত হতভাগায় পরিণত করোনা, এরপর উপস্থিত সাহাবীগণকে জিজ্ঞেস করেনঃ তোমরা কি জান বঞ্চিত হতভাগা কে? সাহাবীগণ বলেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! কে? তিনি বলেন : নামায পরিত্যাগকারী। অন্য এক হাদীসে উল্লেখ রয়েছে, কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যাদের মুখ কাল হবে, তারা হচ্ছে নামায পরিত্যাগকারী। জাহান্নামে ‘মালহাম’ নামক একটি স্থান রয়েছে।

 

সেখানে বহু সাপের অবস্থান। এর প্রতিটি সাপ উটের ঘাড়ের মত মোটা এবং প্রায় এক মাসের পথের সমান লম্বা। এসব সাপ নামায পরিত্যাগকারীকে অনবরত দংশন করবে। এর বিষ তার শরীরে ৭০ বছর ধরে যন্ত্রণা দিতে থাকবে। অবশেষে নামায পরিত্যাগকারীর গোশত খসে খসে পড়বে। বর্ণিত রয়েছে, বনী ইসরাইলের এক মহিলা একবার হযরত মূসা (আ)-এর কাছে এসে বলে : হে আল্লাহ্র রাসূল! আমি একটি ভীষণ পাপের কাজ করেছি। পরে তওবাও করেছি। আপনি দোয়া করুন যেন আল্লাহ আমাকে মা করেন। হযরত মূসা (আ) বললেন : তুমি কি গুনাহ করেছ?

 

বলেঃ আমি ব্যভিচার করেছি। এরপর একটি অবৈধ সন্তান প্রসব হলে একে হত্যা করেছি। মূসা (আ) বললেন : “হে মহাপাতকিনী! এক্ষুণি বেরিয়ে যাও। আমার আশংকা, আকাশ থেকে এখনই আগুন আসবে এবং এতে আমরা সবাই পুড়ে ছারখার হয়ে যাব।” মহিলাটি নিরাশ হয়ে বেরিয়ে যায়। অল্পক্ষণ পরেই হযরত জিব্রাঈল (আ) এসে বললেনঃ “হে মূসা! আল্লাহ্ আপনাকে জিজ্ঞেস করেছেন কি কারণে এ তওবাকারিণীকে তাড়িয়ে দিয়েছেন? এর চেয়েও কি কোন অধম মানুষকে আপনি দেখেননি?” হযরত মূসা বললেন : “হে জিবরাঈল! এর চেয়ে পাপিষ্ঠ কে রয়েছে?” হযরত জিব্রাঈল (আ) বললেন : “ইচ্ছাকৃতভাবে নামায পরিত্যাগকারী।”

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button