গল্প

জমানো টাকার কম্বল – মুঞ্জুরুল হক বাশার 

জগন্নাথপুর,সলঙ্গা,সিরাজগঞ্জ

পিঠাপুলির আমন্ত্রণ উপলক্ষে নানাবাড়িতে আমার আগমন। রং-বেরঙের হরেকরকমের পিঠা বানানো হয়েছে। একেক পিঠার একেক স্বাদ। কোনোটা ঝাল আবার কোনোটা মিষ্টিজাতীয়। রাত্রিতে পেটপুরে খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে গেছি। মামার ডাকে ঘুম ভাঙলো। ফজরের নামাজের জন্য ডাকলেন তিনি। অলসতার দরুন নতুনভাবে কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমের আয়োজন করলাম। কিন্তু ঘুম বেশিক্ষণ স্হায়ী হলো না। জোড় করে মামা টেনে ওঠালেন। ওজু সম্পূর্ণ করে শীতের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে পশমি পোশাক পরিধান করলাম। নামাজের উদ্দেশ্য মামা-ভাগনে রওনা দিলাম মসজিদ অভিমুখে। মসজিদে যেতে বেশ কয়েকটি বাড়ি-ঘর পেরুতে হয়। একটা বাচ্চার ক্রন্দন-রোলের আওয়াজ শুনে থেমে গেলাম পথিমধ্যে। হাড়কাঁপানো শীতের রাতে কম্বল না থাকার অভিযোগ তার। বাবা নিতান্তই গরীব মানুষ। শত অভিযোগের সত্ত্বেও ছেলেকে শুনাচ্ছেন শান্তনার বাণী। কিন্তু বর্তমান কম্বল কেনার মতোও সামর্থ্য নেই তার। রিক্সা ছিলো তার উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন। সেটাও এক্সিডেন্টের কবলে পরে ভেঙেচুরে খানখান। মেরামত করতে অনেক টাকার দরকার। সবকিছু শ্রবনান্তে বুঝতে পারলাম, বোধহয় শীত আরম্ভ হওয়ার পর থেকেই কান্না করে ছেলেটি নতুন কম্বলের জন্য। ফজরের নামাজ পরে তাদের সাহায্য করার বিষয়টি  হামদরদির সাথে আলোচনা করলাম। দুজনের জমানো টাকা দিয়ে বেশ দামী একটা নীল কম্বল কিনলাম। পরদিন বিকেলে তাদের বাড়িতে গেলাম কম্বলটি দিতে। আমাদের আগমনের উদ্দেশ্য শুনে বাচ্চার মা’র আঁখি দ্বয় থেকে ঝরছে লোনাজল। মাথায় হাত বুলিয়ে আমাদের জন্য দুআ করলেন। হঠাৎ ছেলেটি বাড়িতে আসলো। সবকিছু শুনে অত্যাধিক খুশি হয়ে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো আমাদেরকে । আনন্দের আভা তার চোখেমুখে পরিস্ফুট। খুশিতে লাফিয়ে লাফিয়ে উঠোন পেরিয়ে বাহিরে গেল তার আশেপাশের বাচ্চাদের অবগত করতে।

Related Articles

Back to top button