হটাৎ কিসের সাথে যেন ধাক্কা খেয়ে দাড়িয়ে গেলাম। তাকিয়ে দেখি একটা মেয়ে। দুজন দুজনকেই জড়িয়ে আছি। মেয়েটি আমাকে ছেড়ে বলতে শুরু করলো………….
আম্মু আজকে বাবার মন খারাপ কেন?
জানি না তুমি গিয়ে জিজ্ঞেস করো, তোমার বাবার কাছে। আব্বু, আব্বু তুমি কাঁদছো কেন? আমাদের পরিবারে তো কষ্ট বলতে কিছু নেই বা ছিলনা তাহলে তুমি কাঁদছো কেন? লিয়ন বাবা বলো! তখনই ওর মা এসে ছাবিতাকে নিয়ে গেলো। চলো তোমার বাবাকে বিরক্ত করোনা উনি এই দিনে প্রতিবছর মন খারাপ করে। এই দিনটিতে কিছু খায়না, মুখে কোনো হাসি ফোটে না। লিয়নের একটাই মে ছাবিতা খুব দুষ্টুমি করে আবার বেশ মিষ্টিও।
ওদের পরিবার একটা রাজকীয় পরিবার বললেও ভুল হবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রীও এত মান-মর্যাদা নেই। নেই ঐ পরিবারের মতো ক্ষমতা। ঐ পরিবারের সাথে মিশে আছে শতবছরের ঐতিহ্য, ইতিহাস, আর তা সম্পুর্ন সততা বীর সাহসী গল্পে পরিপূর্ণ। ঐ পরিবারে দুঃখের কোনো লেশমাত্র নেই। সদাসর্বদা সবার মুখে হাসি ফোটে থাকে। কিন্তু এই ঐতিহ্য লিয়ন পরিবর্তন করেছে। বছরে নিদিষ্ট একটা দিনে লিয়ন মন মরা হয়ে বসে থাকে। শুধু তাই তাই নয় ঝরে চোখ থেকে অশ্রু। আর সেই দিনটি হলো ১৫ ই মার্চ। লিয়ন একমাত্র ব্যাক্তি কয়েক শত বছর পড়ে এই পরিবারে শুধু তার চোখ থেকে জ্বল ঝরছে।
ছাবিতা ওর বাবাকে এভাবে দেখে মেনে নিতে পারেনি। ওরও কষ্ট হচ্ছে । পরের দিনে মোটামুটি সব যখন ঠিক হয়ছে তখন বললো লিয়নকে বাবা একটা কথা বলবে? জ্বি মা বলবো বলো তুমি কি কথা শুনবে / সত্যি? হ্যে সত্যি। তাহলে হাতে হাত রেখে বলো। লিয়ন ছাবিতার হাতে হাত রেখে বললো হুম বলবো। লিয়ন বাবা তাহলে বলো তুমি কাল কাঁদছো কেন? কেন তোমার মন খারাপ ছিল গতকাল? আরে মা তুমি এ-সব কিছুই বুঝবে না। বাবা তুমিই বলেছিলে বলবে। এখন তাহলে বলো। যখন বলতেই হবে তাহলে শোনো।
এই পরিবার আর ভালো লাগছিল না, আমি একটু একা থাকতে চেয়েছিলাম। চেয়েছিলাম অন্যদের মতো করে থাকতে যখন ইচ্ছে তাই করবো যেথায় যেতে মন চায় সেথায় যাব। কিন্তু আমার ভাগ্যে এগুলো ছিলনা। আমায় সকালে ঘুম থেকে ডাকিয়ে তোলা হতো। কয়েকজন ফ্রেশ করাতো। একজন ছিল আমার কমিশনার চিফ তিনি এসে আমার কাছে বগবগ করে লিষ্ট পড়তো আজ সারাদিন কি কি করবো কোথায় যাবো ইত্যাদি আর সে অনুযায়ী দিন কাটাতে হতো আমার। এর বিপরীতে কিছুই করতে পারতাম না আমি । আর এসব কর্মকান্ড ছিল আমার একদম বিরক্তিকর। তাই ভাবতাম কোথাও পালিয়ে যাবো আমি আর সেখানে গিয়ে কয়েকটি বন্ধু বানাবো। আর ওদের সাথে মন খুলে বলবো চলবো দেখবো পৃথিবীটাকে। ভাবনা অনুযায়ী একদিন সুযোগ এলো আর সুযোগটাকে হাতছাড়া করিনি। তখন আমার বয়স ছিল, মাত্র চৌদ্দ বছর।
আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ,বাংলাদেশের কোনো এক ঐতিহাসিক পরিবারের একটা অনুষ্ঠানের নিমন্ত্রণ ছিল আমার। তাই সকালে আমাকে জাগিয়ে তোলা হয়। আমাকে ফ্রেশ করিয়ে সকালের নাস্তা সেরে বেড়িয়ে পড়লাম বাংলাদেশ যাত্রার উদ্দেশে। কিছুক্ষণ পড়ে বাংলাদেশ বিমানবন্দর এসে পৌছালাম। ঐদিন একি ফ্লাইটে এসেছিল কিশোর এক শিল্পী। আর সেখানেই পড়লো হাজারো মানুষের ঢল। তার যত ফ্যানফলোয়ার ছিল সবাই তাকে অভ্যার্থনা জানাতে এসেছে। আমি সহ আমার চিফ ও সিকিউরিটি গার্ডেরা ঐ ভিরের মাঝে চোখের আড়াল হয়ে গেলাম। আর তখনই আমি পালিয়ে গেলাম তাদের কাছ থেকে। আমি অচেনা এক শহরে, কিছুই চিনি না কোথায় যাব কিছুই বুজছি না। হয়তো ওরা আমাকে ধাওয়া করছে। আমি দৌড়াতে শুরু করলাম। হটাৎ কিসের সাথে যেন ধাক্কা খেয়ে দাড়িয়ে গেলাম। তাকিয়ে দেখি একটা মেয়ে। দুজন দুজনকেই জড়িয়ে আছি।
মেয়েটি আমাকে ছেড়ে বলতে শুরু করলো এই ছেলে এই, মেয়েদের দেখলেই ধাক্কা খেতে মন চায় দেখে হাঁটতে পারো না। আমি বললাম ছড়ি ছড়ি ক্ষমা করবেন আসলে আমাকে ওঁরা তাড়া করছে আমাকে পেলে মেরে ফেলবে। আমায় আমি বাঁচার জন্য দৌড়াচ্ছিলাম। প্লিজ আমাকে একটু পালাতে সাহায্য করুন প্লিজ। আমার কথাগুলো শুনে ও আমার দিকে মায়াবী দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। আমাকে বল্লো আচ্ছা আমার সাথে আসো। আমি কিছু না ভেবেই ওর সাথে হাঁটতে শুরু করলাম। আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে এয়ারপোর্টের বাহিরে নিয়ে আসলো। আমাকে দাড় করিয়ে বললো আচ্ছা তোমাকে কেন তাড়া করছিল আর কারা? মানে কয়েকদিন ধরে কিছু খাইনি আমার পেটে অনেক ক্ষুধা তাই। ব্যাস আর বলতে হবে পেটে অনেক ক্ষুধা তাই চুরি করতে চেয়েছিলে। আচ্ছা তোমার কি ঘরে খাবার নেই তুমি চুরি করতে চেয়েছিলে? তোমার বাসা কোথায়? মাথাটা নিচু করে দাড়িয়ে আছি আমি । ও আবারও বললো তোমার বাসা কোথায়? আমি হাড়িয়ে গেছি ছোটোবেলায় আমার কেউ নেই আমার কাছে। কথাটা শুনে আমার দিকে রইলো। আচ্ছা চলো আমার সাথে তোমাকে আমি পেট পুড়ে খাওয়াবো। আমার হাত ধরে একটি হোটেলে নিয়ে গেলো। বললো তুমি কি খাবে? আমি বললাম যা খেলে পেট পুড়বে আমি তাই খাবো। একটা হাসি দিয়ে খাবার অর্ডার করলো আমরা দুজনেই বসে খেলাম।
খাওয়া শেষে ও আমাকে বিদায় দিয়ে চলে যেতে লাগলো আবার ফিরে জিজ্ঞেস করলো এই এই তোমার নাম কি? আমার নাম লিয়ন। বাহ খুব সুন্দর নাম। প্রায়ই আমার নামের কাছাকাছি। আমার নাম লিয়ানা। আমি ভাবছি এখন কোথায় যাবো কি করবো রাস্তার এক পাশে একটি গাছের সাথে হেলান দিয়ে বসে পড়লাম। খুব ভয় ভয় করছে । প্রায়ই এক ঘন্টা হয়ছে পালিয়েছি আমি। এতক্ষণে হয়তো আমার কথা দুইদেশের টেলিভিশনে দেখানো হয়ে গছে। হয়তো বাবা মা ও জেনে গেছে আমি পালিয়েছি।
লিয়ানা বাসায় চলে এলো ওর মা বক বক করছে। ধ্যাত মেয়েটা থাকে বাহিরে, একা একা চলাফেরা করে দেশ এমনিতেই ভালোনা কখন কি হয়ে যায় কে জানে। ওর বাবাকে কতদিন ধরে বলতেছি একটা লোক রাখো অন্তত পক্ষে বাজার আর মেয়ের দেখাশোনা করতো। কিন্তু কে শুনে কার কথা। আমার কপালেই ছিলো বাঁধা এই কিপটে জামাই। মা,মা তুমি কি বললে? আমার বাবা কিপটে? কিপটে না তাহলে কি! দাড়াও আজকেই আব্বু আসলে তোমার এসব কথা বলবো আর তখনই বুজবে মজা। হয়ছে হয়েছে এখন নিজের কাজ করেন বাবার জন্যতো খুব দরদ মনে হয় কলিজা জ্বলে।
আরে আরে মা আর মেয়ে কি নিয়ে ঝগড়া বাঁধলো হু? লিয়ানার বাবা। বাবা বাবা দেখো মা তোমাকে সারাদিন কিপটে বলে আচ্ছা বলোতো এরকম কথা আমার শুনতে ইচ্ছে করে? কি বলে জানো? সেই কবে থেকে বলছি একটা ছেলে পেলে রাখতে অন্তত পক্ষে মেয়ের দেখাশোনা আর বাজারটা সামলাতে পারতো। আরে বাবা আমি বলছিতো রাখবো কাউকে কিন্তু পেতে হবে তো এরকম লোক তাইনা। তখনই লিয়ানার লিয়নের কথা মনে পড়লো।
পর্ব সমাপ্ত