গল্প

নিয়তি – সাদিয়া আফরোজ

কমলাঃ কি রে নীলিমা, তোর কি হয়েছে? তোকে এমন দেখাচ্ছে  কেন?
নীলিমাঃ না রে, কিছু হয়নি আমার। চল স্কুলে যাই।
কমলাঃ না তোর কিছু হয়েছে বল আমাকে। কয়েক দিন থেকে দেখছি তুই অন‍্য মনোষ্ক হয়ে থাকিস। কখনো কথা বলিস কখনো বলিস না। আগে তো তুই এমন ছিলি না। কি হয়েছে তোর?
নীলিমাঃ আমার কোন কিছু হলে কি আমি তোকে না বলে থাকতে পারি,হা হা হা।
কমলাঃ আচ্ছা তা তো ঠিক বলছিস।আমাকে তো তুই সব কথা বলিস। ঠিক আছে চল স্কুলে যাই। অনেক দেরি হয়ে গেছে।
( স্কুল যাওয়ার পথে)
কায়সারঃ কি রে কেমন আছিস তোরা? তোরা কি স্কুলে যাইস?
কমলাঃভালো আছি ভাইয়া। আপনি কেমন  আছেন?হ‍্যাঁ ভাইয়া স্কুলে যাই।
কায়সারঃ আমি ও ভালো আছি। আচ্ছা যাও স্কুলে যাও। ভালো ভাবে দেখে শুনে যাইশ।
কমলাঃ আচ্ছা ভাইয়া যাই তাহলে। নীলিমা চল তাড়াতাড়ি দেরি হয়ে যাচ্ছে।
 শাহ্জাদাঃ আজকে অংক করে এনেছিস তোরা। স‍্যার কিন্তু আজ অংক না হলে মারবে।
নীলিমাঃ হ‍্যাঁ আমি অংক করেছি।
কমলাঃ আমি তো অংক করিনি? এখন কি হবে। শাহ্জাদা আমাকে অংক করে দাও না প্লীজ।
শাহজাদা ঃ আচ্ছা ঠিক আছে আমি খাতা দিচ্ছি দেখে তুলে নেও। আমি করে দিতে পারব না।
কমলাঃ তার পারবে কেন? অন্য কেউ চাইলে তো ঠিকই করে দিতে।
শাহ্জাদাঃ লজ্জা ভরা হাসি মাখা মুখ নিয়ে বল। কি যে বল তুমি না। বলে চলে যায়।
কমলাঃ নীলিমা তুই কেন লজ্জা পাচ্ছিস? আমি তোকে কিছু বলিনি।
নীলিমাঃ আচ্ছা ঠিক আছে অংক কর।
শাহ্জাদাঃ ক্লাস রুমে বার বার আড় চোখে নীলিমার দিকে তাকায়। নীলিমা ও একটু পর পর তার দিকে তাকায়।
কমলাঃ কি রে চোখে চোখে কথা হচ্ছে। এদিকে দেখ স‍্যার দেখতে পেলে সমস্যা হবে। ক্লাস শেষ করে।
শাহ্জাদাঃ আমার বলা যত কথা আছে,সব যেন কবিতার বাণী,এই গোলাপ গ্রহণ করে  ধন‍্য করো আমাকে, ওগো  মনের রানী। ( হাটু গেরে প্রস্তাব )
নীলিমাঃ ফুল নিয়েই বাড়িতে দৌড় দেয়। ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে খাটে শুয়ে গোলাপকে চুমু দিয়ে সজোরে বুকে চাপিয়ে ধরে।
শাহ্জাদাঃ জানালার ও পাশ থেকে নীলিমার এই আবেগী দৃশ্য দেখে। আর আনন্দে উদ্বুদ্ধ  হয়ে জোরে একটা  চিৎকার করে।
নীলিমাঃ মাথা তুলে জানালার বাইরে তাকে হাসি উজ্জ্বল মুখ দেখে নিজও একটা লজ্জাবতীর হাসি দিয়ে জানালা বন্ধ করে দেয়।
জমেলাঃ নীলিমা দরজা খুল। কি হয়েছে রে তুই দরজা দিয়ে রাখছিস কেন? খুল দরজা।
নীলিমাঃ দাদী পরে দরজা খুলব। তুমি এখন  এখান থেকে যাও দাদী।
জমেলাঃ এই চ‍্যাংড়ির মতি গতি ভালো দেখছি না। কখন কি হয় বুঝা যায় না।
নীলিমাঃ সন্ধ্যায় পড়তে বসে শাহ্জাদার কথা ভাবে আর মুচকি মুচকি হাসে। হঠাৎ দেখে শাহ্জাদা জানালার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।
চমকে উঠে।তুমি  এখানে কেন? শাহজাদাকে বলল নীলিমা।
শাহ্জাদাঃ তোমাকে দেখতে বড় ইচ্ছে করছিল তাই দেখতে এলাম।
নীলিমাঃ দেখা হয়েছে এখন বাড়ি যাও। পড়তে বসো গিয়ে। কালকে স্কুলে দেখা হবে।
শাহ্জাদাঃ আর একটু থাকি না প্লীজ। তুমি পড় আমি তোমাকে বিরক্ত করব না। দূর থেকে শুধু অপলক দৃষ্টিতে একটু সময় তোমাকে দেখব। তুমি আমার দিকে তাকাবে না কিন্তু হা হা হা।
নীলিমাঃ তুমি আমার দিকে তাকিয়ে থাকলে কি আমার পড়ায় মন বসবে বোকা।( লজ্জার হাসি হেসে)
শাহ্জাদাঃ ওমন করে হেসে না। আমি তো এমনিতেই পাগল হয়ে আছি আর ঘায়েল করো না গো।
জমেলাঃ কার সাথে কথা বলিশ নীলিমা। ঘরে প্রবেশ করে।
নীলিমাঃ কই দাদী কার সাথে কথা বলব?বই পড়ছি দেখছ না।
শাহ্জাদাঃ আচ্ছা চলে যাই।  স্কুলে দেখা হবে কাল। (ইশারায় বলে চলে যায় )নীলিমাও ইশারায় বিদায় জানায় শাহ্জাদাকে।
কলমাঃ কি রে নীলিমা আজ  তুই এত তাড়াতাড়ি স্কুল যাওয়ার জন্য তৈরী। আজ তোর মনটাও দেখি খুব খুশি খুশি। বসন্তের কোকিল গান ধরেছে নাকি।
নীলিমাঃ কথা কম বলে চল আমার সাথে। তাড়াতাড়ি স্কুলে যাব আজ। আচ্ছা চল।
কায়সারঃ কমলা স্কুলে যাচ্ছিশ। আড় চোখে  কমলার দিকে দেখে নীলিমা কমলাকে বলে।
কি রে আমারে তো বললি বসন্তের কোকিল  সুর তুলেছে। এখন এখানে ভ্রমর দেখি সরাসরি ফুলের কাছে। হা হা হা।
কমলাঃ স্কুল যাচ্ছি তো আপনি দেখতেই পাচ্ছেন। জিজ্ঞাসা করার কি আছে। ( রেগে বলে  চলে যায় )
শাহ্জাদাঃষ্কুলে কেউ আসেনি। সে একাই এসে বসে আছে। এমন সময় নীলিমা ও কমলা হাসি উজ্জ্বল মুখ নিয়ে হাজির হয়।
কমলাঃ শাহজাদাকে দেখে। ও এজন্য তাড়াতাড়ি স্কুলে আসা। তো আমি এখন কি করব শুনি। তোরা প্রেম  করবি এখন। আমি কি করব?
শাহ্জাদাঃ না আমরা তিন জনে মিলে এখন গ্রুপ স্টাডি করব। তুমি যা ভাবছো তা নয়।
ও আচ্ছা, আমি যা ভাবছি তা নয় ( দুজনের দিকে তাকিয়ে )
নীলিমা ঃ আয় বসতো। বেশি বুজিস না। কম কথা বল। আমরা এখানে পড়ব বলে তাড়াতাড়ি এসেছি।
শাহ্জাদাঃ হ‍্যা, চলো পড়া শুরু করা যাক। পড়ার ফাঁকে ফাঁকে শাহ্জাদা আর নীলিমা চোখে চোখে ইশারায় কথা বলে। কমলা দেখে নীলিমাকে বলে  কি হচ্ছে এখানে । পড়াশোনা নাকি প্রেম?
কমলাঃ তোরা পড়।  আমি অন্যদের সাথে গিয়ে আড্ডা দেই। একথা বলে সে ওখান থেকে ওঠে  যায়।
শাহ্জাদাঃ কেমন আছো নীলিমা। শরীর মন কেমন আছে?
নীলিমাঃ কাঁপা কাঁপা কন্ঠে শরীর ভালো । কিন্তু মন খুব জালাচ্ছে।।মন বড় উতলা আনমনা।  বড় বিবাঙ্গী।মন চুরি হয়ে গেছে।
শাহ্জাদাঃ তাই বুজি! বড় মছিবতের কথা তো। কার এত বড় সাহস হলো তোমার  মন চুরি করার। কোথায় হারিয়ে এলে তোমার মুল‍্যবান মন?
নীলিমাঃ লজ্জার হাসি হেসে, যাও জানি না। বলে সে ওঠে দৌড়ে পালায়। এই নীলি শোন  শোন প্লীজ যেও না। আমার কথা শেষ হয়নি। নীলি শোন।একথা বলে সে ও উঠে দাঁড়াল। কিন্তু নীলিমা বান্ধবীদের সাথে ক্লাসে চলে গেলে।
( ক্লাস শেষে রাস্তায় )
কমলাঃ নীলিমা তোদের প্রেম কত দূর এগুলো।
দেখলাম তো হেসে হেসে খুব কথা  বলা হলো।
বল না কত দূর এগুলোতে পারলি।
নীলিমাঃ আরে দূর আমি জানি না। বলে লজ্জা রাঙা হাসি নিয়ে ছুটে বাড়িতে গেলো।
জমেলাঃ কি রে চ‍্যাংড়ি তোর মন দেখি বসন্তের বাতাসে দোল খাচ্ছে। তোর ব‍্যবহার ভালো লাগচ্ছে না।
নীলিমাঃ আরে দাদী তুমি যে  কি বল না। বসন্ত কাল তো এখন না। আমার কাছে বসন্ত আসবে কোথা থেকে। বুজি রে চ‍্যাংড়ি বুঝি। তোর বয়সে আমি ও ছিলাম। চুল কি এমনি সাদা হইছে। নীলিমা দাদীর গলা জড়িয়ে। দাদী!
জমেলাঃ তা তোর কোন নাগড় মন চুরি করে নিয়ে গেলো। তার মনের খবর কি? তোর স্থান কি তার মনে আছে। এমন সময় ঘরের ওপাশ থেকে কুহু,কুহু ডাক ভেসে আসল। জমেলা বলে ঐ দেখ তোর ভ্রমর হাজির হয়েছে। নীলিমা লজ্জা পেয়ে  ঘরে দৌড় দিয়ে যায় । জানালা দিয়ে দেখে শাহ্জাদা দাঁড়িয়ে আছে।
নীলিমাঃ কি হয়েছে? এখন  কেন এখানে এসেছ?
শাহ্জাদাঃ দৌড়ে জানালার কাছে এসে নীলিমার হাতে এক টুকরা কাগজ দিয়ে বল। এটা পড়ে তোমার কথাও আমাকে লিখে দিবে। আমি সন্ধ্যার গোধূলি বেলায় এসে নিয়ে যাব। বলে সে চলে যায়।
নীলিমাঃকাগজটা মেলে তো অবাক! দেখে একটি কবিতা লেখা।সে আনন্দে পুলকিত হয়ে  কবিতা পড়া শুরু করে। কবিতা ছিলো এই—
“নিত্য কত দেখেছি তোমায়
আড় চোখে চেয়ে চেয়ে,
তোমার চোখে চোখ পড়তেই
আমার দৃষ্টি রাখতাম সরিয়ে।
কত না কথা বলেছি একা
তোমার কাছে কখনো বলিনি যা,
হৃদয় ক‍্যানভাসে আঁকা যে মুখ
বুকের ভিতরেএ লেপে  দেয় নিবিড় সুখ।
আমার মনের আয়না মাঝে
তোমার মুখের জ‍্যোৎস্না হাসে,
তোমায় নিয়ে মন স্বপ্ন দেখে
গোধূলি বেলায় বসে দুইজনে এক সাথে।”
নীলিমা আনন্দে হেসে দেয়।ভাবে আমি কি লিখে দিবো তাকে। আমি তো তার মত করে লিখতে জানি না। আচ্ছা, আসুক সন্ধ্যায়। তারপর দেখা যাক কি করা যায়।
শাহ্জাদাঃ সন্ধ্যায় এসে হাজির। নীলিমাও অপেক্ষা করছিল, কখন সে আসবে? এমন সময় জানালা খুলে দেখে  গাছে নিচে সে দাঁড়িয়ে তার জানালা পানে চেয়ে আছে। নীলিমা জানালা খুলে অবাক হয় আবার তার লজ্জা মাখা হাসি মুখ দেখে শাহ্জাদা অনেক খুশি হয়।
নীলিমাঃ কতক্ষণ হলো এখানে এসে দাঁড়িয়ে আছো?
শাহ্জাদাঃ এই তো অল্প কিছুক্ষণ আগে এসেছি। আমার কাগজ কোথায়? উত্তর লিখেছো? আমি কিন্তু ব‍্যাকুল হয়ে আছি উত্তরের জন্য।
নীলিমাঃ ইশারায় বলে, একটু দাঁড়াও আমি আসছি। বলে সে  বাইরে গাছের নিচে চলে আসে। শাহ্জাদা হৃদয়ে প্রচন্ড ঝড় ওঠেছে। অনেক ভয় লাগে তার নীলিমাকে কাছে আসতে দেখে। সন্ধ্যার আলো আধারি অন্ধকারে তার মনের রানী তার কাছে আসছে।নীলিমা এসে তার সাথে বসে কিছুক্ষণ প্রেম আলাপ করে। তারপর সে বাড়ি চলে যাওয়ার পথে তার হাতে কাগজটা দিতে দৌড়ে বাড়িতে যায়।
শাহ্জাদাও হাসি মুখে খুশি মনে চলে আসে বাড়িতে।
শাহজাদাঃ কিছুই লেখা নেই কাগজের মধ্যে। এর পরে ভালো করে লক্ষ করে দেখে যে তার প্রিয়সী ঠোঁট এঁকে দিয়েছে কাগজে। সে মহা খুশি।
কমলাঃ কায়সার  ভাই আমার পিছু পিছু ক‍েন ঘোরেন আপনি? আপনার কাজ কর্ম কিছু নাই। আমার রাস্তা ছাড়েন আমার অনেক কাজ আছে।
কায়সারঃ একটু দাঁড়াও কমলা। আমি কিছু কথা বলে চলে যাব। আচ্ছা বলেন তাড়াতাড়ি। কমলা আমারে তুমি বিয়ে করবা? আমি না  তোমাকে অনেক দিন ধরেই পছন্দ করি ভালোবাসি।তুমি রাজি থাকলে আমি ঘটক পাঠাব। বল তুমি রাজি?
কমলাঃ লজ্জা পেয়ে কিছু না বলে হাসি দিয়ে দৌড় দিলো। কায়সার বুঝতে পারল সে রাজি আছে তাই সে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাল।এবং তাদের দুজনের বিয়েও হয়ে গেল।
নীলিমাঃ কি রে আমারে তো খুব বলতি বসন্তের হাওয়া আমার লাগছে,কোকিল ডাকছে। তুই তো সোজা বাঁশরের খাটে এসে বসলি। তলে তলে এত কিছু হয়ে গেল আর আমি টেরও পাইলাম না।
(বাঁশর রাতে কথা)
কায়সারঃ নতুন বউয়ে ঘোমটা খুলে চাঁদ মুখ দেখে বিস্মিত হয়ে যায়। কি  হইছে কমলা? তোমার চেহারা এমন লাগছে কেন? কিছু হয়েছে?
কমলাঃ যান আপনার সাথে কথা নেই? আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছেন? আমি বাইরে মেয়েটা অনেক কঠিন হলেও ভিতর টা কি ওতো কঠিন নাকি? আমি কত দিন ধরে অপেক্ষা করে আছি আপনি আমাকে আপনার মনের কথা বলবেন? আমাকে প্রোপৌজ করবেন। তা না করে সরাসরি বিয়ে করে নিয়ে আসলেন।
কায়সারঃ ও এই কথা। এখনি তোমাকে নতুন করে প্রোপৌজ করছি দাড়া। এই বলে সে বাঁশরের খাট থেকে একটি গোলাপ নিয়ে বলে তুমি কি আমার সাথে এখন বাঁশর করবে আমার সুন্দরী বউ? হা হা হা!
কমলাঃ দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা বলে দুজনের দুষ্টুমি শুরু হয়ে যায়।মিলনে গান গাও শুরু করে তারা।
শাহজাদাঃ নীলিমা ছাড় আমাকে? কি হয়েছে তোমার এমন কেন করছো আজ। শাহজাদা দেখছো না ওদের আজ বাঁশর রাত। হ‍্যাঁ, তাতে আমাদের কি হলো। আমারও প্রেম পেয়েছে চলো  না আজ একটু প্রেম করি। ছাড়ো আমাকে ছুঁতে আসবে না। ওদের বিয়ে হয়েছে আমাদের তো হয়নি। বলে নীলিমা তার বাড়িতে চলে আসে। আর শাহ্জাদা তার বাড়িতে চলে যায়।
এরপর শাহ্জাদা আবার একটি চিঠি লেখে নীলিমাকে।
নীলিমাঃ একটা ছোট ছেলে আপু তোমার পত্র।কে দিয়েছে তোকে? শাহ্জাদা ভাইয়া।বলে চিঠিটা দিয়ে সে চলে যায়। নীলিমা চিঠিটি খুলে আবারও অবাক হয়ে যায়।আবার সে কবিতা লিখে পাঠিয়েছে। কবিতাটা ছিলো এরকম–“””
“আমার প্রেম পেয়েছে খুব
তোমার লাজ্জুক চোখের তারায়
দিয়েছি আমি ডুব,
আমার প্রেম পেয়েছে খুব।
তোমার মেঘ কালো কেশ দেখে
হৃদয় আমার ব‍্যাকুল হয়েছে হায়,
মনের ভিতরে ঝড় ওঠেছে
প্রাণ  বুজি মোর যায়।
ইচ্ছে করে তোমার প্রেম সাগরে
দেই আমি ডুব
আমার প্রেম পেয়েছে খুব।
নীলিমা চিঠিটি পড়ে আর লজ্জায় লাল হয়ে যায়।মনের মাধরী মিশিয়ে সে আনমনে আকাশ পানে চায়। তার হৃদয় পটে আকাঁ মুখটা,আখিঁ পানে দেখে একা একা হেসে যায়।
এর ও কয়েক দিন পরের কথা। নীলিমা শাহ্জাদার সাথে দেখা করতে যায়। এমন সময় খোলা আকাশের নিচে তাদের মাথার উপর রিমঝিম বৃষ্টির পানি পড়তে শুরু করে।এই রোমান্টিক আবহওয়ায় দুজন দুজনকে শক্ত করে আকড়ে ধরে। যেন পরম প্রেমে ওঅতুল আবেগে তাদের একে অপরকে আশটে পৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে। এক নিবিড় মায়ায় জড়ানো কিছু সময় তাদের। পরে নীলিমা কোন কথা না বলে,লজ্জা পেয়ে দৌড়ে বাড়ি চলে যায়।
কয়েক বছর পরের কথা।একদিন কমলার সাথে শাহজাদার দেখা হয়। অনেক দিন পরে দেখা কি খবর কেমন আছিস? তোর বর কেমন  আছে?
কমলাঃ আমরা ভালো আছি। তোমরা দুজনে কেমন আছো?
 শাহ্জাদাঃ আমি তো ভালো আছি। কিন্তু নীলিমার সাথে আমার কথা হয় না অনেক বছর থেকে।তার খবর কি তুই কিছু জানিস?
কমলাঃ না, আমি আজকাল আমার সংসার নিয়ে ব‍্যস্ত হয়ে গেছি।তবে শুনেছি ও পড়াশোনা করছে। পাশাপাশি কফি শপে কাজ করে।
শাহ্জাদাঃও আচ্ছা। আমি জানতাম না। তো ভালো থাক আবার দেখা হবে কোন দিন।
তা তুই কি করিস এখন?
শাহ্জাদাঃ আমি তো কাজের জন্যই এতদিন তার সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি। শহরে থাকি। আজি একবার তার সাথে দেখা করতে হবে। আমার উপর সে ভিশন রাগ করে আছে।তাকে কিছু না বলে চলে গেছিলাম। আমি যোগাযোগ করতে পারিনি। আচ্ছা আসি রে।
শাহ্জাদাঃ ভালোভাবে সেজে এক তোরা ফুল নিয়ে আর এক টুকরা কাগজ নিয়ে গেলো তার কফি শপে। তাকে হঠাৎ করে চমকে দিতে।কিন্ত সেখানে গিয়ে নিজেই চমকে গেলো। ওখানে গিয়ে যা শুনলেন।
নীলিমার এক দূঘটনায় সে কোমায় আছেন কয়েক দিন ধরে।
শাহ্জাদা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পরে জ্ঞান ফিরে পেয়ে সে ছুটে যায় নীলিমার কাছে হাসপাতালে। কিন্তু তার ভাগ্য এতটাই খারাপ ছিলো যে, সে সেদিন ও নীলিমার সাথে দেখা করতে পারল না। ডাক্তার দেখা করতে দেয় না তাকে।
সে টানা কয়েক দিন সেই হাসপাতালে নাওয়া খাওয়া ছেড়ে নির্ঘুম অবস্থায়। আই সি ইউর বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিন্তু তবু নীলিমাএক দেখতে পায়নি সে।
হাসপাতালে শাহজাদার পিতা মাতা গিয়ে তাকে জোর করে নিয়ে আসেন। মা-বাবা সন্তানের এত খারাপ অবস্থা কখনো দেখতে চান না।
শাহ্জাদাঃ মা- বাবার পায়ে ধরে কান্না করে আর বলে আমি শুধু একবার নীলিমিকে দেখতে চাই। আমাকে দেখতে দাও তোমরা। সে সারা দিন রাত নীলিমাকে ভেবে যায় ঘোরের কোণে বসে।
ডাক্তারঃ ফোনে শাহ্জাদা বলছে। হ‍্যাঁ। কি হয়েছে?নীলিমাকে দেখতে আসতে পারেন। ওর জ্ঞান ফিরছে।
শাহ্জাদাঃ হ‍্যাঁ, আমি এখনি আসছি। বলে সে হাসপাতালে ছুটলো। গিয়ে দেখে নীলিমার কেউ সেখানে নেই। যে গাড়িতে তার দূর্ঘটনা ঘটেছিল সেই ভদ্রলোক তার পাশে বসে। নীলিমাকে দেখে সে কান্নায় ফেটে পড়ে।
শাহ্জাদা নীলিমাকে জড়িয়ে ঘরে কান্না করে কিন্তু নীলিমার কোন সাড়া শব্দ নেই। সে শুধু নিঃচুপ দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।
এ অবস্থা শাহ্জাদা তাকে মেনে নিতে পারছে না।তার খুব কষ্ট হচ্ছে নীলিমাকে এভাবে দেখতে।
শাহজাদা নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে কাজ শুরু করে। সারা দিন কাজ করে রাত ভর নীলিমা কাছে থাকে তার সেবা করে। এভাবেই অনেক বছর কেটে যায় কিন্তু নীলিমার তেমন কোন পরিবর্তন আসে না।
শওকত ঃ শাহ্জাদার বাবা। শাহ্জাদা তুমি আর কত দিন নীলিমার জন্য এভাবে করবে তার তো কোন পরিবর্তন আসে না। আমরা মা- বাবা হয়ে কিভাবে তোমার এত কষ্ট সহ‍্য করি বল। এবার নীলিমাকে নিয়তির  হাতে ছেড়ে দিয়ে তুমি বিয়ে কর। আমাদের তো অবস্থা দেখছো। আমাদের সাদ জাগে না নাতি নাতনির মুখ দেখি।
একথা শুনে শাহ্জাদা  আরও শক্ত করে  নীলিমাকে আকড়ে ধরে আর বলে। না বাবা নীলিমা সুস্থ হলে আমি তাকে বিয়ে করব অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারব না। আমাকে এ ব‍্যাপারে আর কিছু বলো না।
নীলিমাঃ মুখে কিছু বলতে পারে না।  শুধু চেয়ে থাকা ছাড়া আর কোন কাজ নেই। কিন্তু আজ তার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। তার মুখের ভাষা হীন কথা চোখের জল হয়ে বলে দিচ্ছে শাহজাদাকে বিয়ে কর।
শাহ্জাদাঃ বুজতে পেরে বললো তুমি এমন কথা বল না। আমি এভাবে তোমাকে নিয়ে অনেক সুখে আছি। শান্তিতে আছি। আমাকে তোমার থেকে দূরে সরিয়ে দিও না। নীলিমার চোখের জল মুছে দিয়ে কপালে একটা চুমু একেঁ দিয়ে সে নীলিমাকে ঘুমাতে বলে।
বলে সে চলে যায় তার কাজে।
কমলাঃ কমলা বাড়ি আছিস নাকি। কে শাহ্জাদা নাকি? হ‍্যা কায়সার ভাই। কমলা কোথায়?
কমলা এই তো বাচ্চাকে খাওয়াচ্ছে। আরে শাহ্জাদা দাড়ে কেন বসো। কি হয়েছে নীলিমার সাথে কথা হয়েছে। অভিমান ভাঙ্গছে তার।
একথা শুনে শাহ্জাদা কান্না করে দেয়। কমলা কাঁদছিস কেন ?কি হয়েছে নীলিমার?
নীলিমার এক্সিন্ডেন্ট হয়েছে। ও কমায় আছে। শুধু চোখ দিয়ে চেয়ে থাকে কিছু বলতে পারে না। তুই আর কায়সার ভাই একবার গিয়ে দেখে আসিস। তোদের দেখে তার যদি একটু পরিবর্তন হয়।
বলে  কান্না করতে করতে সে চলে যায়।
কমলা ও কান্না করে। তার প্রিয়  বান্ধবী ছিল নীলিমা। তার আজ এমন অবস্থার কথা শুনে সে মানতে  পারছে না আর শাহ্জাদা তো তাকে অনেক ভালোবাসে।কিভাবে নিজেকে আটকিয়ে রাখবে তাকে। তাড়াতাড়ি করে কমলা আর কায়সার হাসপাতালে চলে যায়।
কমলাঃ অশ্রু ঝড়া চোখে নীলিমা একি হয়েছে তোর? তোর স্বপ্ন গুলো এমন হয়ে গেলো কেন। বলে কান্না করে।  নীলিমার চোখ দিয়ে ও অশ্রু ঝড়তে থাকে। এমন সময় শাহ্জাদা রুমে ঢোকে । কমলা শাহ্জাদাকে দেখিয়ে নীলিমাকে বলে ঐদেখ ঐ  মানুষটা তোকে কখনো ছাড়বে না।
মরণ আসলেও শক্ত হাতে তোকে আকড়ে ধরে রাখবে বুকে।তুই মানুষ চিনতে ভুল করিশনি।
শাহ্জাদাঃ কমলা তুই একটু বাইরে আয়। আমার কথা আছে। কি হয়েছে বল? আমার মা-বাবা আমার বিয়ে অন্য মেয়ের সাথে ঠিক করেছে। আমি কি করব এখন? নীলিমাকে আমার মা- বাবার অপছন্দের নয় কিন্তু সে সুস্থ নয় অসুস্থ ?সুস্থ কবে হবে কি না হবে কেউ জানে না এজন্য মা- বাবা আমার বিয়ে দিতে চায়। আমি তো নীলিমাকে ছাড়া অন্য কাউকে মেনে নিতে পারব না আমার জীবনে।
কিন্তু আমার কথা মা-বাবা মেনে নিচ্ছেন না।
আমি নীলিমাকে নিয়ে এভাবেই খুশি আছি। আমি বাকি জীবন এভাবেই নীলিমার পাশে থাকতে চাই।
কমলাঃ আমি কি বলব জানি না। তারা বিজ্ঞ তারাই বাস্তবতা সম্পর্কে ভাল জানেন বুজেন।
বাস্তবতা তো এটাই বলে তুই বিয়ে করে নেয়। আর ওকে ওর নিয়তির হাতে ছেড়ে দে।বলে কমলা চলে যায়।
শাহজাদাঃ নীলিমার কাছে গিয়ে তার হাত দুটি শক্ত করে ধরে কান্না করতে থাকে। নীলিমাকে কথা বলতে বলে। সে ব‍্যর্থ হয়ে চলে যায়।
 নীলিমার অনেক কষ্ট হয়। সে কথা বলতে চেষ্টা করে। অনেক চেষ্টা করে কয়েক দিন পর সে
 শাহ্জাদা বলে ডাক দেয়।
শাহ্জাদা অবাক হয়ে নীলিমার দিকে তাকায় আর তাকে বুকের মাঝে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে
বলে —–
” আমি অপেক্ষা করে আছি
কত শতাব্দীর ধরে
আমার প্রিয়তমার মুখে
মিষ্টি মধুর বলি শুনব বলে।
হাজারো ব‍্যথা হাজারো গ্লানি
আজ মুছে গেছে ও স্বপ্ন রানী।
আজ শুনতে চাই তোমার কথা
যার জন্য অপেক্ষা করেছি আমি।
নীলিমা তুমি আমাকে ডেকেছো!বুকে জড়িয়ে ধরে তার গালে কপালে চুমু দিতে থাকে। জড়িত ধরে দুজনেই কান্না করতে থাকে।
নীলিমাঃ একটা কথা বলি তোমাকে?
শাহ্জাদাঃ বল বল আজ তুমি বলবে আমি  শুনব। অনেক বছর থেকে তোমার কথা শোনার জন্য অপেক্ষা করে আছি বল।
নীলিমাঃ আমাকে আরও জোরে জড়িয়ে ধর। যেন মরণও আমাকে তোমার থেকে নিয়ে যেতে না পারে। আমি তোমার বুকে এভাবেই বেঁচে থাকতে চাই।
শাহ্জাদাঃ হ‍্যাঁ, আমার বুকে তোমাকে সারা জীবন এভাবেই ধরে রাখব। আমি তোমাকে বিয়ে করব?
নীলিমাঃ ছেড়ে দিয়ে নাহ, বুক থেকে মাথা সরিয়ে নেয়। না এটা হয় না।
শাহ্জাদাঃ  কেন হয় না? আমি এত বছর তোমার সাথে কথা বলিনি, কোন যোগাযোগ রাখিনি এজন্য তুমি অভিমান করেছো। ছরি। আমি কাজ নিয়ে ব‍্যস্ত হয়ে গেছিলাম। আর তোমার সাথে যোগাযোগ করার মত কোন মাধ‍্যম ছিলো না। কাজে এত ব‍্যস্ত ছিলাম যে চিঠি লেখার সময় পেতাম না। তবুও কয়েকটি চিঠি পাঠিয়ে ছিলাম কিন্তু কোন উত্তর পায়নি।
নীলিমাঃ আমি তোমার অপেক্ষায় ছিলাম। তোমার খোঁজ নেওয়ার জন্য  অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু তোমার কোন খোঁজ পায়নি। এজন্য বাধ‍্য হয়ে পরিবারের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছিলাম। আমি বিয়ে করেছিলাম। বলে মাথা নিচু করে কান্না করে সে।
শাহ্জাদাঃ অবাক হয়ে যায়। আর বলে তাহলে গত কয়েক বছর থেকে তুমি এখানে হাসপাতালে পড়ে আছো। কই কাউকে আসতে দেখিনি ত তোমার স্বামী বা স্বামীর  বাড়ির কেউ তো একবারও দেখতে আসেনি তোমাকে।
কি হয়েছে তাদের?
নীলিমাঃ বিয়ের কয়েক  মাসের মধ্যে আমার স্বামী মারা যায়। তার ও আমার মত দূর্ঘটনা ঘটেছিলো। কিন্তু সে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। এরপর থেকে আমি কফি শপে কাজ করি আর পাশাপাশি পড়াশোনা করি।
শাহ্জাদাঃ অনেক কান্না করে আর নিজেকেই দোষ দেয়। সে বলে আমার জন্য তোমার জীবনে আজ এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আমি যদি আরও আগে এসে তোমার খোঁজ নিতাম তাহলে তোমার সাথে আজ রকম কিছু হতো না ।দুজনে অনেক কান্না করে অনেক সময় ধরে।
নীলিমাঃ তুমি নিজেকে দোষ দিও না। এটা আমার ভাগ‍্যে লেখা ছিলো। আমাকে আমার নিয়তির উপর ছেড়ে দাও। তুমি এবার ঘর বাঁধ। অন্য কাউকে নিয়ে সুখের স্বপ্ন দেখ।আমি তো এখন একটা জিন্দা লাশ। আমাকে ছেড়ে দাও।
শাহ্জাদাঃ রেগে নীলিমাকে একটা থাপ্পর দিয়ে বলে তুই শুধু আমার। আমার জন্য সৃষ্টিকর্তা তোকে সৃষ্টি করেছেন। এজন্য আমাকে ছেড়ে অন্য কারো হয়ে তুই বেশি দিন থাকতে পারিশনি। নীলিমাকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে আর বলে তোমার শান্তির নীড় আমার বুক। এই বুক ছাড়া তুমি আর অন্য কোন পুরুষের বুকে গিয়ে সুখ পেতে পার না। আমি ও তোমাকে জড়িয়ে ধরে যে সুখ পাই সে সুখ অন্য কাউকে দিয়ে পাব না।
তুমি উঠতে না পার, কিছু করতে না পার নাই তবুও  আমি তোমাকে চাই। তোমাকে আমি কোলে করে নিয়ে গিয়ে সব করাব। আমার বুকের ভিতর জড়িয়ে রাখব সব সময়। তবুও ছাড়ব না।
নীলিমাঃ কিন্তু সমাজ মেনে নিবে না। আমি তোমার উপর বোজা হয়ে থাকতে চাই না। তুমি আমার নিয়তির উপর আমাকে ছেড়ে দাও।
একথা বলার সাথে শাহ্জাদা তার ঠোঁট দিয়ে নীলিমার ঠোঁট চেপে ধরে আর শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরে।কিছুক্ষণ এভাবে থাকার পর শাহজাদাঃ সমাজের মানুষ  এক দিন, এক মাস তোমার বিষয় নিয়ে বলবে এরপর তোমার আমার সুখ দেখে তাই বলবে এটা তাদের নিয়তি। আমি তোমাকে মেনে নিলে আর তুমি আমাকে মেনে নিলে লোকের কথায় দিয়ে কেউ কিছু করতে পারবে না। আর তুমি আমার হবে  আমি তোমার হব এটাই আমাদের নিয়তি।
নীলিমাঃ চুপ করে থাকে আর কোন কথা বলে না। এরপর তাদের বিয়ে হয়। কিন্তু নীলিমা শুধু কথা বলতে পরে নিজে নড়াচড়া করতে পারে না। এ অবস্থায়ও শাহ্জাদা তাকে ভিশন ভালোবাসে।
শাহ্জাদাঃ বাশঁর রাতে। মনে পড়ে নীলিমা কমলার বাঁশর রাতে তোমাকে বলেছিলাম আমার পেয়েছে খুব। আজ আমাদের বাঁশর রাত বলেই নীলিমা কে কোলে তুলে বলে -“”””—-
” দে দোল দোল বধূকে পেয়েছি বুকে
ভরেছে আমার কোল,
দে দোল দোল”
এরপর বলে আমার আজ খুব ঘুম পেয়েছে। চলো আমরা ঘুমাই।
নীলিমাকে বুকে নিয়ে তার কপালে আলতো চুমু এঁকে দিয়ে তারা ঘুমিয়ে পড়ে। তারপর থেকে তাদের সুখের জীবন শুরু হয়। তাদের নিয়তি তাদের  একত্রিত করেছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button